:: সুখেন্দু সেন ::
এক প্রাণোচ্ছল টগবগে মানুষ। প্রচণ্ড যার জীবনীশক্তি। হাসতে হাসতে ক্যান্সারের সাথে লড়েছে। চিকিৎসা শেষ হতে না হতেই আবার লিখতে বসেছে। শক্ত লেখা। শব্দের কারুকাজে প্রাণস্পর্শী। কলমের যাদুতে অবলীলায় বের হয়ে এসেছে রাজনীতি, সামাজিক অসঙ্গতির জটিল বিষয়গুলি। প্রাণ চঞ্চল, তুমুল আড্ডাবাজ। তাঁকে ঘিরেই সার্বক্ষণিক এক প্রাণের মেলার আবহ। প্রচণ্ড আবেগী মানুষ, জেদী, রাগী। স্পষ্টবাদিতার দুর্নাম গায়ে মেখে নিতে কুণ্ঠিত নয় মোটেও। তবুও একটা শিশুমন লুকিয়ে থাকতো সমস্ত অন্তকরণে। তাঁর কথায় একটা ঐন্দ্রজালিক শক্তি। মায়াজালের ঠাসা বুনন। মাতিয়ে রাখার, জাগিয়ে তোলার এক অদ্ভুত ক্ষমতা। সুনামগঞ্জের জলজোছনা ছিল তাঁর রক্তে মেশানো। বৃষ্টিতে যাঁর নেশা। ঘুরে ফিরে বারবারই পিছুটানে ফিরে আসা এই শহরের অলিগলিতে। সেই মানুষটিরই জীবনবেলা শেষ হয়ে গেলো অকালে। বড় তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে গেলো প্রাণের মেলার সব আয়োজন।
শীত শহরে নিঝুম সন্ধ্যা নামে। শূন্যতার এক হাহাকার বয় বুক চিড়ে। স্মৃতি হাতড়ে খুঁজি জুবিলীর উৎসব, ঢাকার সেগুন বাগিচা রেস্তোরার প্রাণোচ্ছল সভা। ফেসবুক খুলে দেখি ম্যাসেঞ্জারে পাঠানো বাংলাদেশ প্রতিদিনের নিয়মিত কলামের লিংকগুলি। মুম্বাইয়ের যশলোক হাসপাতাল থেকে পাঠানো ম্যাসেঞ্জারের টেক্সট – “আশীর্বাদ করবেন দাদা। এখানে আসাটা আমার ভুল হয়নি। চিকিৎসকরা খুব আন্তরিক। আমি সেরা চিকিৎসাটাই পাচ্ছি।” প্রত্যুত্তরে বলি- “যার এতো জীবনীশক্তি সেতো হারতে পারে না। তুমি জীবনজয়ী এক যোদ্ধা।” কিন্তু তারপর আবার করোনা, শেষে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের মরণ ছোবল।
মৃত্যু সংবাদ শুনে তাৎক্ষণিক কিছু লিখতে পারিনি। ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজে কাতর। গতকাল গায়ে কিছুটা জ্বর নিয়েই পৌরসভা চত্বরে গিয়েছিলাম শেষ দেখাটা দেখতে। আমাদের শহরের সেই দুরন্ত আর ডানপিঠে ছেলেটি নিথর দেহে কেমন শান্ত হয়ে শুয়ে আছে। অনুজপ্রতিম হাবিব ফিরে গেছে তাঁর আপন নীড়ে। ভালো থেকো হাবিব…, তোমার প্রিয় শ্যামল মাটির বনছায়।