বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জ পিটিআইয়ে (প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট) প্রশিক্ষক এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে প্রাথমিক শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। ১৭ জন প্রশিক্ষকের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন। ৪ জন অফিস সহকারীর মধ্যে একজনও নেই। ৬ জন অফিস সহায়কের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র একজন। এছাড়াও প্রশিক্ষণ ভবন, ছাত্র ও ছাত্রীনিবাসেও আবাসিক সমস্যা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সুনামগঞ্জ পিটিআয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষকদের পেশাগত মান ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৬৫ সনে সুনামগঞ্জ পিটিআই স্থাপিত হয়। ২০১৮ সন থেকে এই প্রতিষ্ঠান থেকে সিইনএড থেকে ডিপিএড পর্যায়ে আবাসিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানে সুপার ইনডেন্টেন্টে বাদে ৫জন বিষয়ভিত্তিক ইনস্ট্রাক্টর, ১২ জন সাধারণ বিষয়ের ইনস্ট্রাক্টর থাকার কথা। কিন্তু প্রায় দুই বছর ধরে মাত্র ৫ জন কর্মরত আছেন। ১৮ মাস মেয়াদী দুটি সিফটে ৪ শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা বর্তমানে আবাসিক-অনাবাসিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। কিন্তু ইনস্ট্রাক্টরের অভাবে তারা নিয়মিত প্রশিক্ষণ পাচ্ছেননা বলে জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরাও জোড়াতালি দিয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
সূত্র আরও জানায়, বিষয়ভিত্তিক ৫জন প্রশিক্ষকের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ১ জন। এই একজনের পক্ষে অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষক প্রদান সম্ভব হচ্ছে না। সাধারণ প্রশিক্ষক ১২জনের মধ্যে কর্মরত আছেন ৪জন। তারাও নির্ধারিত বিষয়ের বাইরে প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। এছাড়া চারজন অফিস সহকারীর মধ্যে ১জনও কর্মরত না থাকায় দাফতরিক কার্যক্রম চালাতে সমস্যা হচ্ছে। ৬জন অফিস সহায়কের মধ্যে মাত্র ১জন কর্মরত আছেন। এই জনবলের অভাবে কাক্সিক্ষত প্রশিক্ষণ সম্ভব হচ্ছেনা বলে একাধিক প্রশিক্ষণার্থী জানিয়েছেন।
জনবল সংকটের পাশাপাশি একটি নতুন ভবন নির্মাণসহ পুরুষ ও নারীদের ছাত্রাবাস সংস্কারের কথাও জানালেন সংশ্লিষ্টরা। বর্ষা আসলে শিক্ষক মিলনায়তনসহ প্রশিক্ষণ ভবনের নিচতলা পানিতে ডুবে যায় বলে জানা গেছে। মাঠে হাঁটু পানি দেখা দেয়। তখন মূল্যবান জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন প্রশিক্ষণ সংকট দূরীকরণ ও অন্যান্য সমস্যা সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পিটিআইয়ের প্রশিক্ষণার্থী পলি রায় বলেন, পিটিআই শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বড়ো সংকট ইনস্ট্রাক্টর না থাকা। যে কারণে কাক্সিক্ষত প্রশিক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। তবে যারা আছেন তারা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রাখতে। সব বিষয়ের প্রশিক্ষক না থাকলে প্রশিক্ষণার্থীদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ হবে না। তাহলে আমরা পিছিয়ে থাকবো। এতে ফলাফলেও প্রভাব পড়বে।
সিনিয়র ইনস্ট্রাক্টর মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, প্রশিক্ষক, অফিস সহকারী ও অফিস সহায়কের একাধিক পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। প্রশিক্ষণ ও দাফতরিক কার্যক্রম চালাতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাছাড়া বন্যার সময় প্রতি বছর আমাদের শিক্ষক মিলনায়তন ও শ্রেণিপক্ষে পানি প্রবেশ করে সব নষ্ট হয়ে যায়। এ থেকে আমাদের উত্তরণ না হলে প্রতি বছর ক্ষয়-ক্ষতি বাড়বে।
সুনামগঞ্জ পিটিআই সুপার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. জসীম উদ্দিন বলেন, আমরা কম জনবল নিয়ে চেষ্টা করছি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে। এতে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশিক্ষকদের ধকল বেশি যাচ্ছে। আমাদের এই সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। আশা করি শীঘ্রই এর সমাধান হবে।