1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০৭:৫৯ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ছাতক-দোয়ারায় যে কারণে আ.লীগ প্রার্থীদের ভরাডুবি

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২১

বিশেষ প্রতিনিধি ::
দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার দ্বন্দ্বের কারণে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে বলে মনে করছে তৃণমূল। প্রার্থী নির্বাচনে স্বজনপ্রীতি এবং অজনপ্রিয় বিতর্কিতদের প্রার্থী করায় এই ভরাডুবি বলে মনে করছেন তারা। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে জেলার আসন্ন অন্য ইউনিয়নের নির্বাচনেও প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ছাতকের ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বিদ্রোহীদের মধ্যে বিজয়ী হয়েছেন ৩ জন। বাকি দুটি ইউনিয়নের একটিতে জামায়াতে ইসলাম ও বিএনপির এক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। একই দিন অনুষ্ঠিত দোয়ারাবাজার উপজেলার ৯টি ইউনিয়নেও একই কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের ৫ জন এবং বিদ্রোহী ৩ জন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একজন নির্বাচিত হয়েছেন।
ছাতক দোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ১৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৪টিতেই বিদ্রোহী ছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরীর মধ্যে বিরোধের কারণে দুটি উপজেলায় আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে দুই ধারায় বিভক্ত। বিভিন্ন সময়ে দুই পক্ষের মধ্যে হামলা-মামলার ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের সম্পর্ক ভালো থাকায় তার বলয়ের প্রার্থীদেরই মনোনয়ন দেওয়া হয়। জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী প্রার্থী হয়েও বাদ পড়েন শামীম আহমদ চৌধুরীর অনুসারীরা। এ কারণে শামীমের একাধিক সমর্থক বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের বেশ কয়েকজন দলীয় প্রার্থীকে টেক্কা দিয়ে বিজয়ীও হয়েছেন।
ছাতক সদর ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম (আনারস) প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। জনপ্রিয়তায় তিনি এগিয়ে থাকলেও আওয়ামী লীগ থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তিনি ২ হাজার ৭৪৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নৌকার প্রার্থী রঞ্জন কুমার দাস। এই ইউনিয়নে নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেছেন।
উত্তর খুরমা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ নৌকা প্রতীকে ৪ হাজার ৬৩৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। কালারুকা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান অদুদ আলম (নৌকা) ৯ হাজার ৭৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গয়াছ আহমদ নৌকা প্রতীকে ৬ হাজার ৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন।
জাউয়াবাজার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান ইউপি সদস্য আব্দুল হক ঘোড়া প্রতীকে ৩ হাজার ৭২৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নূরুল ইসলাম পেয়েছেন ২ হাজার ৭৫৬ ভোট। আব্দুল হককে নৌকা না দেওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ তাকে ভোট দিয়ে জয়ী করেন।
গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সুন্দর আলী নির্বাচিত হয়েছেন। ইসলামপুর ইউনিয়নে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন জেলা ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে জামায়াত রোকন সুফী আলম সুহেল। চরমহল্লা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি নেতা আবুল হাসনাত বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা কদর মিয়া (নৌকা)। দলীয় কোন্দলের কারণে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরাজিত হয়েছেন বলে মনে করেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
দোলারবাজার ইউনিয়নে বিএনপি নেতা নূরুল আলম চশমা প্রতীকে অল্পভোটে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আমির উদ্দিনকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন। তৃণমূলের দাবি ছিল আওয়ামী লীগ থেকে আমির উদ্দিনকে মনোনয়ন দানের।
দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী আবু বকর (ঘোড়া প্রতীক) ২ হাজার ৮২৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এই ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নৌকাকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন।
এদিকে দোয়ারাবাজার উপজেলা সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুল হামিদ, বোগলাবাজার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মিলন খান, সুরমা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ হালিম বীরপ্রতীক, পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল ওয়াহিদ এবং নরসিংহপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান নূর উদ্দিন আহমদ নির্বাচিত হন। লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত বিজয়ী হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী জহিরুল ইসলাম। বাংলাবাজার ইউনিয়নে বিজয়ী হয়েছেন আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এম. আবুল হোসেন। মান্নারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিএনপি নেতা) ইজ্জত আলী এবং দোহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী শামীমুল ইসলাম।
মান্নারগাঁও গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী সুজন দাস বলেন, দলীয় কোন্দলের কারণে আমাদের উপজেলায় নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হলে সবগুলোতেই নৌকা বিজয়ী হতো। এতে দলের সাংগঠনিক অবস্থা আরো দুর্বল হয়েছে।
দোলারবাজার ইউনিয়নে অল্পভোটে পরাজিত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আমির উদ্দিন বলেন, দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের দাবি ছিল আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য। কিন্তু একজন অযোগ্য, বিতর্কিত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তাই জনগণ আমাকে প্রার্থী করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত অল্পভোটে আমাকে পরাজিত হতে হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন বলেন, তৃণমূল থেকে পাঠানো প্রার্থীদের তালিকা বাস্তবতা বিবেচনা করে আমরা কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলাম। প্রার্থী নির্বাচনে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম হয়নি। যারা দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে গিয়ে যারা নির্বাচন করে নৌকাকে পরাজিত করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com