1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ১২:৪২ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

টাঙ্গুয়ার হাওর : হুমকিতে অতিথি পাখির আবাসস্থল

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২১

বিশেষ প্রতিনিধি ::
হুমকিতে পড়েছে অতিথি পাখির (পরিযায়ী) আবাসস্থল। হাওরের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, বৃক্ষ নিধন ও বিষটোপ দিয়ে পাখি হত্যা মূলত এজন্য দায়ী বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচারের (আইইউসিএন) পর্যবেক্ষণ বলছে, গত ২০ বছরে বাংলাদেশে অতিথি পাখির বসতি এলাকা ৩৫ শতাংশ কমেছে। মূলত টাঙ্গুয়ার হাওর, হাকালুকি হাওর, বাইক্কা বিল, উপকূলীয় এলাকা, নদীর চর ও দেশের অভ্যন্তরীণ বিল এবং জলাশয়গুলোয় বসতি গড়ে পরিযায়ী পাখি। দেশে যে ৭১১ প্রজাতির পাখি দেখা যায়, তার মধ্যে ৩৮৮ প্রজাতি হচ্ছে পরিযায়ী। এদের মধ্যে ২০০ প্রজাতির পাখি আসে শুধু শীতকালে। তবে গ্রীষ্মকালেও ১১ প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে আসে। অন্যান্য পরিযায়ী পাখি বছরের অন্যান্য ঋতুতে এসে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের হিসেব অনুযায়ী, আট থেকে নয় বছর আগেও বাংলাদেশে চার থেকে পাঁচ লক্ষ অতিথি পাখি আসতো। এসব পাখির অধিকাংশ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন হাওর জলাভূমি দাপিয়ে বেড়াতো। গত কয়েক বছর থেকে অতিথি পরায়ন সিলেট থেকে অতিথি পাখি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। অতিথি পাখির স্বর্গ রাজ্য সিলেটের হাওর জলাভূমি পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে উপযোগিতা দিন দিন হারাচ্ছে।
প্রতি বছরের মতো ২০২১ সালের ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি পাখি শুমারি করেছে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব, বন বিভাগ এবং আইইউসিএন। তাদের জরিপে দেখা যায়, ২০২১ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরে ৬১ হাজার ১২৫টি পরিযায়ী পাখি আসে, মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরে ২৫ হাজারটি পাখি আসে। এ বছর দেশের অন্য স্থান উপকূলীয় এলাকা, পদ্মার চর ও অন্যান্য জলাভূমি মিলে মোট ১ লাখ ২৫ হাজার ১১৫টি অতিথি পাখি আসে। ২০২০ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরে ৫১ হাজার ৩৬৮টি, হাকালুকি হাওরে ৪০ হাজার ১২৬টি পাখি। এছাড়া, উপকূল এলাকা, পদ্মার চর ও অন্যান্য জলাভূমি মিলে মোট ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫১৯টি অতিথি পাখির সংখ্যা জরিপে বলা হয়। এর আগের বছর ২০১৯ সালে মোট ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬৫টি অতিথি পাখি বাংলাদেশে আসে বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়।
অতিথি পাখির সবচেয়ে বড় অভয়ারণ্য হাকালুকি ও টাঙ্গুয়ার হাওরে শীতকালে ঝাঁকে ঝাঁকে আসা পাখির সংখ্যা কমার পেছনে হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করাকে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, হাওর ও জলাভূমিতে পাখির খাবার ও আবাসস্থল ধ্বংস করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে হাওরের বিলগুলোর নাব্যতা সংকট, ইজারাদার দ্বারা বিল শুকিয়ে মাছ আহরণ, হিজল, করচ বৃক্ষ উজাড়, জাল ও বিষটোপ দিয়ে পাখি শিকার- এসব কারণে যুগ যুগ ধরে পাখির কাছে অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত এসব স্থান এখন পাখির অনিরাপদ আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।
ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলার মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত টাঙ্গুয়ার হাওর। মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩০টিরও বেশি ঝর্ণা এসে মিশেছে এই হাওরে। দুই উপজেলার ১৮টি মৌজায় ৫১টি হাওরের সমন্বয়ে ৯,৭২৭ হেক্টর এলাকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর জেলার সবচেয়ে বড় জলাভূমি। পানিবহুল মূল হাওর ২৮ বর্গকিলোমিটার এবং বাকি অংশ বসতি ও কৃষি জমি। এক সময় গাছ-মাছ-পাখি আর প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের আধার ছিল এই হাওর। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে টাঙ্গুয়ার হাওরকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়, তখনই অবসান হয় দীর্ঘ ৬০ বছরের ইজারাদারির। ২০০০ খ্রিস্টাব্দের ২০ জানুয়ারি এই হাওরকে ‘রামসার স্থান’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, মাছ ও পাখির অভয়ারণ্য টাঙ্গুয়ার হাওরকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে হলে প্রশাসনকে আন্তরিক হতে হবে এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। তাহলে মাছ ও পাখির অভয়ারণ্য কিছুটা রক্ষা করা যাবে। তিনি বলেন, বর্তমানে যেসব পর্যটক হাওরে আসছেন, তাদেরকে পরিবেশ এবং হাওরের জীববৈচিত্র্যকে গুরুত্ব দিয়ে হাওরের সৌন্দর্য অবলোকন করতে হবে। ইঞ্জিন চালিত নৌকা, বাদ্যযন্ত্র দিয়ে গান, খাবার প্যাকেট,পলিথিন, পানির বোতল এসব হাওরের পানিতে ফেলে হাওরকে ধ্বংস করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেটের সাধারণ স¤পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, মানুষ পাখির আবাসস্থল ধ্বংসের পাশাপাশি নির্বিচারে পাখি শিকার করায় অতিথি পাখির সংখ্যা কমে আসছে। আইন পাস হওয়ার পরও পাখি শিকার কমছে না। যে সব স্থানে পাখি শিকার ও বিক্রি হয় এসব স্থানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযান চালালে শিকারীদের হাত থেকে পাখি রক্ষা পাবে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর শীত মওসুমে শীতপ্রধান দেশ হিমালয়, সাইবেরিয়া, আসাম, ফিলিপিন্স, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ পশ্চিম চীনের মালভূমি, রাশিয়া, ফিনল্যান্ড, তিব্বতের উপত্যকা প্রভৃতি অঞ্চল থেকে পাখিরা আমাদের দেশে আসে। সেসব দেশে প্রচণ্ড শীতে খাদ্য ও আশ্রয়ের চরম সঙ্কট দেখা দেয়; একটু উষ্ণতা, আদ্রতা ও শ্যামলিমার আশায় হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তারা চলে আসে বাংলাদেশে। খুঁজে নেয় নির্জন স্থান, হাওর, জলাশয় ও বনাঞ্চল। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসব পাখি ৬-৭ মাসের জন্য শীতের শুরুতে আশ্রয় নেয়।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট ঢাকার পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল সাদিক বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য স্বীকৃত এই টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিযায়ী পাখিসহ বন্যপ্রাণী এখন হুমকিতে পড়েছে। অতিথি পাখি না এলে হাওরের তলদেশ শেওলায় ভরে যাবে। পানিতে অক্সিজেন থাকবে না। পাখি না এলে মাছের পুষ্টিকর খাদ্য, পাখির মলের অভাবে মাছ পুষ্টিকর হবে না। যেখানে প্রতি বছর শীতে লক্ষাধিক অতিথি পাখি আসত গত বছর মাত্র ২৫ হাজার অতিথি পাখি এসেছে। এই পাখি আসা ২০হাজারের নিচে নেমে গেলে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কো রামসার সাইট থেকে টাঙ্গুয়ার নাম কেটে দেবে। ফলে টাঙ্গুয়ার নাম বিশ্ব ঐতিহ্য থেকে মুছে যাবে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে অসাধু পাখি শিকারিদের ছাড় দেওয়া হবে না। কঠোরভাবে দমন করা হবে। শুধু পাখিই না হাওরের কোনো কিছুই যাতে অসাধু চক্রের হাতে না পারে সেজন্য প্রশাসন কঠোর ভূমিকা রাখছে। আর অতিথি পাখি নিধন বন্ধে সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com