1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

মেগা প্রকল্পগুলো শেষ হলে অর্থনীতির গতি আরও বাড়বে : পরিকল্পনামন্ত্রী

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর, ২০২১

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, এর আগে বিভিন্ন সুযোগ এলেও এই প্রথম আমরা জাতি হিসেবে উন্নত বিশ্বে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছি। আমরা ঔপনিবেশিকতার বেড়াজালে অবদ্ধ ছিলাম। পাকিস্তানের সঙ্গে ২০-২২ বছর, ব্রিটিশদের ২০০ বছরের শাসনামলে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। তবে সেই সময় শেষ করে করেছি। স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বিশ্বমাপের দেশ গড়ছি। অবকাঠামো বলতে অনেক কিছু বোঝায়- শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, সড়ক, সেতু ইত্যাদি। প্রতিটি ক্ষেত্রে গত ১২ বছরে আমাদের সমাজে বিবর্তন হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ সড়ক নিয়ে বললে এখন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া যেতে কোনো ফেরি পারাপার হতে হয় না। অনেক অনেক সেতু-কালভার্ট দরকার। এটা অনেকটা করা হয়েছে তবে আরো দরকার।
রেলওয়ে অবকাঠামো উন্নয়নে ব্রিটিশরা দৃষ্টি দিয়েছিল। তারা বাণিজ্যিক স্বার্থ হাসিলের জন্য উন্নতি করেছিল। তবে পরবর্তী সময়ে আমাদের সামাজিক স্বার্থে এর উন্নতির দরকার ছিল। পাকিস্তান সময়ে রেলওয়ের উন্নতি হয়নি। পাকিস্তান-পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর সময়ে প্রণীত প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এটাকে উচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। পরবর্তী শাসকদের অগ্রাধিকারের তালিকা স¤পূর্ণ ভিন্ন ছিল।
নব্বইয়ের দশকে সরকারি-বেসরকারি সবাই বাস-ট্রাক কিনে ব্যবসায় নামে। ফলে তাদের সুবিধার্থে সড়কের উন্নয়ন দ্রুত হয়। সে সময় নদীকে অবহেলা করা হয়েছে। নদী আমাদের ঐতিহ্যগতভাবে একটা প্রাকৃতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। কিন্তু এটার উন্নত হয়নি। তবে বর্তমান সরকার সেটার প্রতিও নজর দিয়েছে।
সম্প্রতি সরকারের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন-সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমের সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকারের সময় রেল মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। বর্তমানে রেলকে ঘিরে একাধিক মেগা প্রকল্প চলমান। আমাদের সরকারই সিদ্ধান্ত নেয় রেলকে ডাবল ট্রাক করার। বিএনপির শাসনামলে নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ অনেক রেললাইন বন্ধ করে দেয়া হয়। তারা দেশের উন্নয়ন চায়নি। তারা চেয়েছে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করতে। ভারতের সঙ্গে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সব পয়েন্ট বর্তমান সরকার খুলে দিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্ভাবনার সব দুয়ার খুলে দিতে চান।
তিনি বলেন, বিমান যোগাযোগ উন্নয়নেও বর্তমান সরকার কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ঢাকা বিমানবন্দর সম্প্রসারণ ও নতুন টার্মিনাল নির্মাণ আরেকটি সাহসী পদক্ষেপ। এটি স¤পন্ন হলে আমরা আগামী ২০-২৫ বছরে আরামে চলাচল করতে পারব। কক্সবাজারে নতুন আঙ্গিকে বিমানবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব প্রকল্প আমাদের উজ্জীবিত করে ও সাহস জোগায়। বাংলাদেশ একটি সমুদ্রবন্দরের দেশ ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ এখন চার সমুদ্রবন্দরের দেশ হচ্ছে। চট্টগ্রাম, মহেশখালী, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দর এখন সচল।
মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, পদ্মা সেতু বর্তমান সরকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প। এ সেতু চালু হলে অভ্যন্তরীণ বাধা না থাকলে, আমাদের ৫০ বছরের পরের বাংলাদেশে অচিন্তনীয় পরিবর্তন আসবে। অভ্যন্তরীণ বাধা পেরিয়েছি। সাধারণ মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। তারা এখন মনে করে ভালো জীবন আমাদের জন্য সম্ভব।
তিনি বলেন, বিআরটিএ, এমআরটিএ ও নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মের কাছে এক বিশাল মানসিক পরিবর্তন। আমরা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করছি। ওষুধ, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে এসব পাওয়ার/শক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। এর কাজ দ্রুত এগোচ্ছে। কভিডের ফলে অনেক অগ্রগতি পিছিয়ে গেলেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পেছায়নি। এখানে রাশিয়ার বড় ভূমিকা রয়েছে।
মন্ত্রী এমএ মান্নান আরও বলেন, কোথাও ছোট খাল পার হতে সাঁকো লাগে। সেখান থেকে গ্রামের মানুষ শহরে যাচ্ছে কর্মসংস্থানের জন্য। আর এ যাওয়া মানেই কর্মসংস্থানের সন্ধান। অবকাঠামো নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের লাখ লাখ গ্রামের মানুষ মুক্তি পেয়েছে। তাছাড়া আধুনিক প্রযুক্তিকে আমাদের সাদরে গ্রহণ করা দরকার। আমাদের এখন সর্বত্র পরিবর্তন হচ্ছে। যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু নির্মাণের ফলে দেশের জিডিপি ২ থেকে ৩ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি সেকেন্ডে বাড়ছে যেটা একটা ডায়নামিক পরিস্থিতি। পদ্মা সেতু হলে দক্ষিণাঞ্চলের জীবনমানের শুধু পরিবর্তন হবে না, সিলেটের মানুষেরও হবে। আমাদের ছোট ও ঘনজনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় আমরা অনেকে অনেক সময় আক্ষেপ করি কিন্তু আনন্দের ব্যাপারও এখানে আছে। আমরা কম বিনিয়োগে বেশি আউটপুট পাব। আমাদের দেশে ১ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করলে গড়ে দুই হাজার লোক ব্যবহার করে কিন্তু চীনে করে মাত্র ২০০ জন।
মন্ত্রী বলেন, ব্যয়ের দুটি দিক। একটি ব্যয় হয় নির্মাণসামগ্রীতে। আরেকটি ব্যয় হয় বেতন-ভাতা ইত্যাদিতে। বাজারদর থেকে বেশি ব্যয়ে সামগ্রী কেনা হয়ে থাকে। এটি অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি খতিয়ে দেখা দরকার। আর দ্বিতীয় হচ্ছে গাফিলতির ব্যয়। কাজ করে না, বাড়ি গেলে আসে না। অনেক জুনিয়র অফিসার সিনিয়র স্যারকে ফোন করেন না। আবার তাদের কাছ থেকে কাজ বুঝেও নেয় না। এগুলো আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। এগুলো হলো আমলাতন্ত্রের মন্দ দিক। তবে ভালো দিকও আছে। আমলাতন্ত্র মানুষের আয় অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে ও কাজ হচ্ছে কি না তা খেয়াল রাখে। মন্দের দিক হচ্ছে কাজ না করা। এ মন্দের ভীষণ দাম। অজ্ঞতার জন্য যদি ইট-বালুর দাম বেশি দিয়েও থাকি তার থেকে সময়ের অপচয় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দুর্নীতি। যারা দুর্নীতি করে তারা কিন্তু ঝুঁকি নিয়েই করে। আইনগত ঝুঁকির পাশাপাশি সামাজিক ঝুঁকিও রয়েছে। এসব দুর্নীতি রুখে দেয়ার জন্য সরকার বেশকিছু বিধিবিধান তৈরি করেছে। এগুলোকে আমরা প্রতিপালনের চেষ্টা করি। কিন্তু এখানে আমি একটি বাধার কথা বলব- যা স¤পূর্ণ আমার নিজের মতো। আমি মনে করি, বিচার প্রক্রিয়াটা যদি দ্রুত না হয় তাহলে কিন্তু ফায়দা হয় না। ‘জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড’। দেরিটা হয় প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করতে গিয়ে। আবার প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ অনুসরণ করাও আবশ্যক। আমাদের সাংবিধানিক ও আইনি কিছু বাধ্যবাধকতাও আছে। যেমন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিরও আইনের প্রতিটি পর্যায় পর্যন্ত যাওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্র এমএ মান্নান এমপি বলেন, আমরা প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশও রয়েছে। তিনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন, যেসব প্রকল্প পিছিয়ে পড়েছে এগুলোকে দ্রুত টেনে আনতে হবে। কিন্তু দেখা যায়, প্রকল্পগুলোতে যারা কাজ করছেন, সে সব শ্রমিক বা কর্মীরা উৎসব উপলক্ষে তিনদিনের ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে নয়দিন কাটিয়ে আসছেন, যা এক ধরনের সামাজিক বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। এছাড়া আরো যে বিষয়টি ভয়ংকর রকম সত্য তা হচ্ছে বরাদ্দ। অর্থ না হলে কাজ শুরু হবে না। বাজেট পাস হওয়ার পর বরাদ্দের অর্থ ধরে রাখার কোনো বিষয় নেই। আইনেও বরাদ্দের অর্থ দিয়ে দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু আমাদের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত কারণে প্রকল্পের পরিচালকরা সময়মতো বরাদ্দের অর্থ হাতে পান না। এ অবস্থার পরিবর্তন হতে হয়তো সময় লাগবে।
তিনি বলেন, অবকাঠামোর পরিকল্পনা আছে, তবে ব-দ্বীপ পরিকল্পনারটা অগ্রাধিকার দিতে হবে। আগে আমরা কোনো চিন্তা ছাড়াই অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা করতাম। ব-দ্বীপের পরিকল্পনার কথা কারো বিবেচনায় ছিল না। আমরা কিন্তু পলিমাটির ব-দ্বীপে বাসবাস করছি। আমাদের নদীগুলো নিত্যপরিবর্তনশীল। আমাদের নদ-নদীর চিত্র লাগবে। এগুলোর গত ১০০-২০০ বছরের গতিবিধির ম্যাপ থাকতে হবে। আমরা ডাচদের সহায়তা নিচ্ছি। নদীভাঙন রোধে কাজ করতে হবে। প্রকৃতির দিকে নজর রেখেই আমাদের অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, সড়কের একটা বাস্তবতা স্বীকার করতে হবে। বাংলাদেশের মাটি (ভূমি) আর ইউরোপের মাটি; বাংলাদেশের মাটি আর ভারতের ঝাড়খণ্ডের মাটি; বাংলাদেশের মাটি আর চীনের পার্বত্যাঞ্চলের মাটি কিন্তু এক নয়। বাংলাদেশ প্রাইভেট প্রপার্টির হেডকোয়ার্টার। এখানকার মাটিতে সরকার সহজে হাত দিতে পারে না। সেখানে হাত দিলেই ২০-২৫টা আইন আছে। শত শত বছরের পুরোনো আইন। আমাদের দেশে ব্যক্তিগত স¤পত্তিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু চীনের সরকারকে জমি কিনতে হয় না। যেখানে ইচ্ছা সেখানে চীন সরকার সড়ক বানাতে পারে। কাউকে জিজ্ঞেস করার দরকার হয় না। আমাদের ভূমি কম। অত্যন্ত ঘনবসতি। আমাদের এখানে এক বিঘা জমির যে দাম, ভারতের উত্তরপ্রদেশে তার দাম ১০০ ভাগের এক ভাগ। ভারতের উত্তরপ্রদেশে পড়ে আছে শত শত মাইল ফাঁকা জমি। এগুলো আমরা বিবেচনায় রাখি না। এছাড়া আমাদের দেশে প্রাকৃতিক সমস্যা আছে। ৫-৬ মাস ধরে ঝড়-বৃষ্টি হয়। এ সময় কাজ করা যায় না। কাজ করার পরিবেশ থাকে না।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com