কর্ণ বাবু দাস ::
পৌর শহরের ৮০ বছরের বৃদ্ধা খাদিজা বেগম লাঠিতে ভর করে সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন চাল ক্রয় করতে। গতকাল চাল শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি কিনতে পারেননি, তাই আবার আজ আশা নিয়ে আসছেন চালের জন্য। লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। চাল নিয়ে গেলে সকালের রান্না হবে। প্রতিদিন এমনই কয়েক শতাধিক মানুষ চালের আশায় লাইনে দাঁড়ান। কিন্তু তাদের অনেকেই চাল না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের প্রতিদিন ৫টি পয়েন্টে ওএমএস-এর চাল বিক্রি করা হয়। শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, উকিলপাড়া, ময়নার পয়েন্ট, হাছননগর, বড়পাড়া, ষোলঘর, পুরাতন জেল রোড, নতুনপাড়া, তেঘরিয়া এলাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ডিলারদের মাধ্যমে চাল ও আটা বিক্রি করা হয়। জনপ্রতি ৫ কেজি চাল ও ৫ কেজি আটা ক্রয় করা যায়।
ওএমএসের চাল বিক্রির জন্য পৌর শহরে নিয়োগ পান ৯ জন ডিলার। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পরিবার প্রতি ৫ কেজি করে ২০০ জনের নিকট প্রতি কেজি ৩০ টাকা দামে বিক্রির জন্য ১ টন চাল পান। তবে ক্রেতার চাহিদার তুলনায় চালের যে বরাদ্দ হয়েছে তা অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন ডিলাররা।
চাল নিতে আসা রহিমা বেগম বলেন, মানুষের বাসায় কাজ করে সন্তান লালন-পালন করি। এখানে কম টাকায় চাল ও আটা কিনতে পাওয়া যায়। সেজন্য সকালে কাজে না গিয়ে লাইনে দাঁড়াই। চাল কিনে বাসায় গিয়ে রান্না করে বাচ্চাদের খাওয়াবো তারপর কাজে যাবো।
কুলসুম বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ বাজার থাকি চাউল কিনতাম পারি না, দাম বেশি। ইতারলাগি সকাল থাকি বইয়া রইছি কম টেকায় চাউল কিনতাম। সকাল থাকি আইলে কিতা হইবো লাইন শেষ হওয়ার আগেই চাউল শেষ হইযায়। চাউল কিনতাম পারি না। চাউল না পাইয়া আটা কিন্না নেওয়া লাগে। নাই পাইলে আর কিতা করমু।
পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার ডিলার কেবি মুর্শেদ বলেন, সকাল থেকেই আমার এখানে মানুষ জড়ো হন। আমাদের প্রতিদিন ২০০ মানুষের জন্য ১ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। সকাল থেকেই দীর্ঘ লাইন থাকে চাল এবং আটার জন্য। কিন্তু বেলা ১২টার আগেই চাল শেষ হয়ে যায়। চাল না পেয়ে অনেকে ফিরে যায়। সপ্তাহে একদিন পরপর চাল বিক্রি করা হয়। সেজন্য অনেকে কোনদিন বিক্রি হবে তা না জেনে এসে ঘুরে যান। যদি প্রতিদিন চালি বিক্রি করা যেত তাহলে অনেক মানুষের উপকার হতো। সবাই চাল পেতো।
ময়নার পয়েন্টের ডিলার পঙ্কজ চৌধুরী বলেন, কম দামে চাল ও আটা কিনতে সকাল থেকেই দোকানের সামনে মানুষ জড়ো হয়ে থাকেন। আমরা ১ টন চাল পাই। এই চাল ২০০ জনের মধ্যে বিক্রি করি। কিন্তু ২০০ জনের মধ্যে বিক্রি করার পরও অনেক মানুষ চাল পান না। তাদের খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। যদি চালের বরাদ্দ আরেকটু বাড়ানো হতো তাহলে সবাই চাল পেতো। আমরাও হিমশিম খেতাম না।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নকীব সাদ সাইফুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন শহরে ৫ জন ডিলার চাল ও আটা বিক্রি করে থাকেন। পৌর শহরের ৯টি এলাকায় ওএমএস-এর চাল ও আটা বিক্রি হয়ে থাকে। চাল না পেয়ে ফিরে যাওয়ার বিষয়টাকে গুরুত্বের সাথে দেখছি। মানুষ যাতে আরও বেশি উপকার পায় সে ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।