আশিস রহমান ::
দোয়ারাবাজার সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ বছরের পুরনো একটি ছাত্রাবাসের জমি ব্যক্তির নামে নামজারি করে দখল পাঁয়তারার অভিযোগ ওঠেছে। এতে স্কুলের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা বলেছেন, স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখনোব্দি এই ছাত্রাবাসটি ছাত্র শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের পাঠকক্ষ কাম আবাসিক ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি ছাত্রাবাসের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা একটি পরিবার বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস ভূমির নামজারি করিয়ে এটি এখন নিজেদের ভূমি বলে দাবি করছে।
সহকারী শিক্ষক নজির উদ্দিন আহমদ বলেন, স্কুলের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এখনোব্দি এই ছাত্রাবাসটি স্কুলের ছাত্রাবাস হিসেবে শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করে আসছে। সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ মাস্টার, কানাই লাল স্যার এখানে বসবাস করে শিক্ষকতা করেছেন। প্রয়াত কমলেশ স্যার আমৃত্যু এখানে বসবাস করেছেন। এই ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করে অসংখ্য ছাত্র বের হয়েছে যারা এখন দেশ বিদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু সম্প্রতি ছাত্রাবাসের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা সুমন রায়ের পরিবার এটি নিজেদের নামে নামজারি করেছে এবং দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও সুনামগঞ্জ জেলা জজকোর্টের এপিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল আজাদ রুমেন বলেন, আমি দোয়ারাবাজার সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। আমিসহ আমার সহপাঠীদের অনেকেই এই ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করেছি। আমাদের স্মৃতিবিজড়িত এই ছাত্রাবাস রক্ষায় যদি আন্দোলনে করা লাগে প্রয়োজনে আন্দোলনে নামব।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ মাস্টারের পুত্র অ্যাড. নাজমুল হুদা হিমেল বলেন, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার পর দীর্ঘদিন আমার বাবাসহ উনার কয়েকজন সহকর্মী এখানে অবস্থান করে শিক্ষকতা করেছেন। ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রাবাসটি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
দোয়ারাবাজার সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক বলেন, আমাদের প্রায় ৪০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রাবাসটিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অনেক স্মৃতি ও ইতিহাস জড়িয়ে আছে। এই ছাত্রাবাসটি এখন দখলের চেষ্টা চলছে। আমরা উদ্বিগ্ন। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি।
অভিযোগের ব্যাপারে সুমন রায় বলেন, ছাত্রাবাসের ভূমিতে আমার দাদার ব্যক্তি মালিকানাধীন রেকর্ডিয় জমি রয়েছে। আমাদের নামে নামজারি ও কাগজপত্র আছে। যখন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তখন আমার পরিবারের পক্ষ থেকে শর্তসাপেক্ষে ছাত্রাবাসের জন্য ভূমি দেওয়া হয়েছিল। শর্ত দেওয়া হয়েছিল স্কুলের ভবন হওয়ার পর আমাদের জমি ছেড়ে দেওয়া হবে। প্রায় ৮ বছর হয়ে গেছে স্কুলের ভবন নির্মিত হয়েছে, আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছি আমাদের জমির দখল ছাড়তে কিন্তু তাঁরা গড়িমসি করছে। আমাদের মালিকানাধীন জমি আমাদের নিকট ফিরিয়ে দিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাই।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেবাংশু কুমার সিংহ বলেন, এটা স্কুলের ছাত্রাবাস। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দিয়েছি।