মো. শাহজাহান মিয়া ::
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি বলেছেন, আমরা আগে পরাধীন থাকায় পিছিয়ে ছিলাম। এখন আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমরা আর কারো গোলাম হতে চাই না। তাই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাইকে কাজ করতে হবে। এ জন্য নারী-পুরুষ মিলে কর্ম করতে হবে। কাজে কোন বাধা নেই। আমরা সবাই মিলে কর্মতৎপর হলে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
মন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অহেতুক আমার বিরুদ্ধে বদনাম দেয়া হচ্ছে। অথচ আমি কোন দোষ করিনি। তবুও বদনাম সহ্য করতে হচ্ছে। আমি নাকি সব উন্নয়ন শান্তিগঞ্জে করছি। প্রকৃত বিষয় হচ্ছে অবকাঠামো দিক থেকে শান্তিগঞ্জের অবস্থান ভাল হওয়ায় প্রকৌশলীদের পরামর্শে শান্তিগঞ্জের উন্নয়ন হচ্ছে। এতে আমার কোন দোষ নেই। বর্তমানে রেলপথ ও উড়াল সড়কের কাজ প্রক্রিয়াধীন। এতেও বাধা দেয়া হচ্ছে। তিনি বিরোধীদের ইঙ্গিত করে বলেন, আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা আর বাধা দিবেন না। উন্নয়ন কাজে সহযোগিতা করুন। এখন যদি এসব উন্নয়ন না করতে পারি, তাহলে আগামী ৫০ বছরেও হবে কিনা সন্দেহ আছে।
এমএ মান্নান আরও বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি আস্থা রেখে আমাকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। সুনামগঞ্জের উন্নয়ন দেখে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করে সুনামগঞ্জে মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এসেছি। আমার বিরুদ্ধে বদনাম করা হয়, আমি নাকি সব শান্তিগঞ্জে নিয়ে যাচ্ছি। শান্তিগঞ্জে আমার পৈতৃক ভিটা দান করে দিয়েছি। আমার কোথাও তেমন স¤পদ নেই। আমি আপনাদের আমানতের অমর্যাদা করিনি।
শনিবার জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সৈয়দপুর সৈয়দিয়া শামছিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় নব-নির্মিত সৈয়দ দুলাল আইসিটি ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী এমএ মান্নান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা পড়াশোনা করো। ভাল মানুষ হও। তবে বিপথগামী হবে না। বাল্য বিবাহ থেকে সাবধান থাকবে। তিনি শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে বলেন, আমরা স্কুল-কলেজের পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে আন্তরিকভাবে কাজ করছি। এরই ধারাবহিকতায় সৈয়দপুর-সৈয়দিয়া শামছিয়া প্রাচীন মাদ্রাসায় ৫ তলা ও হলিয়ারপাড়া মাদ্রাসায় আরেকটি ৫ তলা নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে।
জনতার উদ্দেশ্যে মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আপনারা সব সময় আমাদের কাছে উন্নয়ন চান। আমরাও আপনাদের কাছে নৌকা প্রতীকে ভোট চাই। নৌকায় ভোট দিলে দেশের উন্নয়ন হয়। বিএনপি বা আর কেউ একটি বাঁশের সাঁকোও দিতে পারেনি। তিনি নিজ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেন, আমি টাকা-পয়সার জন্য রাজনীতি করি না। শুধু আপনাদের সেবা করতে চাই। আমার রাজনীতি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করা। আপনাদের ভোটে টানা তৃতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। আমার নির্বাচনী এলাকাসহ সুনামগঞ্জের হাওরবেষ্টিত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল স্রোতে নিয়ে আসতে আমি কাজ করছি।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান আরও বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে এখনও আমরা পিছিয়ে আছি। এখনও ২০ থেকে ৩০ ভাগ মানুষ নিরক্ষর। এর মধ্যে নারী শিক্ষায় বেশি পিছিয়ে আছি আমরা। আমাদেরকে আরও অনেক পথ এগিয়ে যেতে হবে। বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর উন্নত জাতি গঠনে আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করছে। বিএনপি কোনো উন্নয়ন করেনি। আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের সরকার।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ আবুল কাশেম, জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, সিলেট ল কলেজের অধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট মহসিন আহমদ, জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু।
প্রবীণ মুরব্বি সৈয়দ লাল মিয়ার সভাপতিত্বে ও শিক্ষক মাওলানা নিজাম উদ্দিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সৈয়দপুর সৈয়দিয়া শামছিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মাওলানা সৈয়দ রেজওয়ান আহমদ। বিশেষ মেহমানের বক্তব্য রাখেন সৈয়দ দুলাল আইসিটি ভবন দাতা নবনির্বাচিত সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য গীতিকবি সৈয়দ দুলাল আহমদ। বক্তব্য রাখেন হলিয়ারপাড়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মইনুল ইসলাম পারভেজ।
সভায় সৈয়দ দুলালের কণ্ঠে গাওয়া সোনার বাংলা গান ও শাহেদ নিজামের গাওয়া দেশাত্ববোধক গানে সবাইকে মুগ্ধ করে। অনুষ্ঠান শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ছাত্র আরমান। এছাড়া সভায় অতিথিদের সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রীর একান্ত সচিব হারুনুর রশীদ, জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম, জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আবদুর রব সরকার, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মধুসুধন ধর, উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) গোলাম সারোয়ার, উপজেলা আবাসিক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) আজিজুল ইসলাম আজাদ, সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান তৈয়ব মিয়া কামালী, মিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক শেরিন, পাইলগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান মখলুছ মিয়া, সৈয়দপুর আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রহমান, আবদুস সোবহান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ হুসবান্নুর, সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি সালেহ আহমদ ছোট মিয়া, কলকলিয়া ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ফখরুল হোসেন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জগন্নাথপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাফরোজ ইসলাম মুন্না, উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কল্যাণ কান্তি রায় সানি প্রমুখ।