আশিস রহমান ::
“বেরিয়ে যা, এখানে কেন আসছিস? আমি বীরপ্রতীককে চিনি না, ওরে ঘাড় ধরে বের করে দে…”। চিকিৎসা সেবা চাওয়ায় রোগীর স্বজনকে এভাবেই তিরস্কার করেছেন এক ডাক্তার। এই ঘটনাটি ঘটেছে দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তিরস্কৃত হওয়া রোগীর স্বজনের বক্তব্য সম্বলিত একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ঘটনাসূত্রে জানা যায়, শনিবার ভোর ৫টায় দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের টেংরাটিলা (আজবপুর) গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ বীরপ্রতীক মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর খবর পেয়ে শোকে ভেঙে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তাঁর বড় ছেলে মেজবাউল গণি সুমন। অজ্ঞান অবস্থায় সুমনকে চিকিৎসা দিতে তাৎক্ষণিকভাবে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। এসময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কোনো ডাক্তার না পেয়ে রোগীকে হাসপাতালের আরএমও ডা. সিফাত আরা সামরিনের কোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় ডাক্তার সিফাত আরার কাছে চিকিৎসা সেবা চাইলে সেবার বদলে উল্টো রোগী ও রোগীর স্বজনদেরকে তিরস্কার করে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার হাসান মাহমুদের কাছ থেকে সেবা নিয়ে বাড়িতে ফেরেন তাঁরা।
রোগীর সাথে থাকা স্বজন সদ্য প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ বীর প্রতীকের ভাগ্নি শাহানা আক্তার কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, সামরিন মেডামের বাসায় গেছি, উনি বেডরুমে আছে, আমি উনাকে সালাম দিয়ে যখন বললাম হাসপাতাল কোনো ডাক্তার নাই, আমি বীরপ্রতীক আব্দুল মজিদের বড় ছেলেকে নিয়ে আসছি, উনিত মারা গেছেন, উনার ছেলের অবস্থা খুব খারাপ, এই মুহূর্তে একটু ট্রিটমেন্টের দরকার।
একথা বলার পর ডাক্তার সিফাত আরা সামরিন আমাকে বলেন, “বেরিয়ে যা, বেরিয়ে যা, এখানে কেন আসছিস? আমি বীরপ্রতীককে চিনিনা”। এসময় রুমে থাকা এক মহিলাকে বলেন, “ওরে ঘাড় ধইরা বের কইরা দরজা দিয়ে দে, অফিস টাইম এখন না, বেরিয়ে যা, বেরিয়ে যা।”
শাহানা আক্তার আরও বলেন, এই ডাক্তারের খারাপ আচরণের সুষ্ঠু বিচার চাই আমি। এখানে ডাক্তাররা যেভাবে অবহেলা করে তা বলার মতো না।
রোগী মেজবাউল গণি বলেন, আমার আব্বা মারা যাওয়ার পরে আমি অসুস্থ হয়ে যাই। অসুস্থ হওয়ার পর মেডিকেলের ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। ডাক্তার আমার ফুফাতো বোনের সাথে খারাপ ব্যবহার করে তাঁর আয়াকে বলে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার জন্য। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আমার অনুরোধ, রোগীরা যাতে কোনো ডাক্তারের কাছ থেকে এরকম কোনো ব্যবহার না পায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. সিফাত আর সামরিন বলেন, আমি ৭ দিন ধরে ছুটিতে আছি। আমার বাসার হাউজ কিপারকে নির্দেশ দেওয়া আছে বাসায় যাতে কাউকে ঢুকতে না দেওয়া হয়। সকালে আমার বেডরুমে একজন ঢুকে পড়লে আমি আমার হাউজ কিপারকে একটু বকাঝকা করছি। রোগীর সাথে খারাপ ব্যবহার করিনি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সফর আলী বলেন, চিকিৎসা সেবা চাইতে গিয়ে ডাক্তার কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা সন্তান লাঞ্ছিত হবার খবর শুনে মর্মাহত হয়েছি। আমরা বঙ্গবন্ধু ডাকে সাড়া দিয়ে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলাম। এই দেশে আমাদের সন্তান লাঞ্ছিত হবে তা হতে দেব না। প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আবার মাঠে নামব।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শামস উদ্দিন বলেন, বিষয়টি ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছি।