আশিস রহমান ::
জরাজীর্ণ ভবন, জনবল সংকট ও বিকল যন্ত্রপাতি দিয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলায় ‘নামেমাত্র’ চলছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কো¤পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)-এর কার্যক্রম। সেবা না পাওয়ায় সরকারি এই প্রতিষ্ঠান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন গ্রাহকরা।
উপজেলা বিটিসিএল অফিস সূত্র জানা যায়, পুরো উপজেলাজুড়ে বিটিসিএল’র ৩৫টি টেলিফোন সংযোগ রয়েছে। অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, এই ৩৫টি টেলিফোন সংযোগের সবকটিই বিকল। এসব টেলিফোন সংযোগ দীর্ঘদিন ধরে সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়ে থাকলেও আজোবধি মেরামত করে সচল করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। খোদ উপজেলা বিটিসিএল অফিসের টেলিফোন সংযোগটিও ছয় মাস ধরে বিকল রয়েছে। এতে গ্রাহকরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জানা যায়, ২০০৬ সালে উপজেলায় বিটিসিএলকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ বছর ধরে উপজেলা বিটিসিএল অফিসে কোনো কর্মকর্তা নেই। বছরের পর বছর ধরে মাত্র একজন লাইনম্যান দিয়েই চলছে উপজেলা বিটিসিএল অফিসের কার্যক্রম!
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলা বিটিসিএল অফিসটি অবহেলায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। নাম সম্বলিত কোনো সাইনবোর্ড না থাকায় আবাসিক বাসভবন নাকি অফিস তা দেখে বোঝার কোনো উপায়ই নেই! আশির দশকে নির্মিত দুইতলা বিটিসিএল অফিসটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। চারপাশে ঝোপঝাড় ও আগাছা জন্মেছে। ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে অফিস ভবনের ভেতরের অনেক জায়গায় শেওলা জমেছে। ভবনের দরজা, জানালা ও কাঁচ ভেঙে গেছে। বর্তমানে অফিসে কর্মরত লাইনম্যান ও তার পরিবার ভাঙা দরজা জানালার বিভিন্ন অংশে জোড়াতালি দিয়ে অফিস ভবনটিতে বসবাস ও দেখাশোনা করছেন। অফিসের সামনের কাঁটাতারের সীমানাপ্রাচীরের কোনো দৃশ্যমান অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় প্রাঙ্গণ থেকে মাটি পর্যন্ত চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। অফিস ভবনের ভেতরে থাকা মূল্যবান ম্যাশিনারিজ যন্ত্রপাতি বজ্রপাতে বিকল অবস্থায় পড়ে আছে কয়েক বছর ধরে। সুইচ রুমটিও অকেজো। ৪৮টি মূল্যবান ব্যাটারি ও সোলার প্যানেল ৪ বছর ধরে বিকল হয়ে আছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নির্মাণের পর একবার মাত্র রঙ ও চুনকামের কাজ করতে দেখা গেছে এই ভবনটিতে। এরপর থেকে আজোবধি কোনো ধরনের সংস্কার কাজ চোখে পড়েনি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকেও এখানে আসতে দেখা যায়না। যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম নষ্ট অবস্থাতেই পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে তবুও মেরামত করা হয় না। অফিসটি এখন শুধুমাত্র অফিসের লাইনম্যানের বাসভবন ছাড়া আর কোনো কাজেই আসছে না।
নৈনগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী আশিক মিয়া বলেন, আমরা আগে এই অফিসে এসে টেলিফোন করতাম। বর্তমানে মোবাইলের প্রচলন হওয়ায় টেলিফোনের ব্যবহার কমে গেছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের সিএ সফিক রহমান বলেন, আমাদের অফিসের টেলিফোনটি অনেক দিন ধরেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়ে আছে। বিটিসিএল অফিস থেকেও কোনো খোঁজ নেওয়া হয় না। তাছাড়া এখন টেলিফোন তেমন ব্যবহার করা হয় না। যেকোনো প্রয়োজনে মানুষ এখন মোবাইলে যোগাযোগ করে।
অফিসের লাইনম্যান মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমি এখানে প্রায় ২০ বছর ধরে আছি। অফিসে আর কোনো লোকজন না থাকায় আপাতত আমিই সব দেখাশোনা করছি। আগে আরও দুইজন লাইনম্যান ও একজন ঝাড়ূদার ছিলো তাঁরা অন্যত্র বদলি হয়েগেছে। জনবল সংকটের কারণে জেলা অফিস থেকে আমাদের অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
সুনামগঞ্জ বিটিসিএল অফিসের সহকারী ব্যবস্থাপক নূরুল ইসলাম বলেন, বিকল টেলিফোন সংযোগ সচল করতে আমরা কাজ করছি। বিচ্ছিন্ন সংযোগ মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে।