1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০২:৪৮ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও বেতের পণ্য : ভালো নেই কারিগররা

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আশিস রহমান ::
কামারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা দুই সন্তানের জননী অঞ্জলি দেবনাথ। তার এক মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে, আরেক মেয়ে পড়াশোনা করছে ইন্টারমিডিয়েটে। সন্তানদের নিয়ে তিনি থাকেন বাবার বাড়িতে। স্বামী থেকেও নেই, স্ত্রী-সন্তানদের সাথে যোগাযোগ রাখেন না, ভরণপোষণের খরচপাতির যোগানও দেন না। সন্তানদের পড়াশোনার খরচসহ সাংসারিক ব্যয় নির্বাহে অঞ্জলি দেবনাথ একসময় নিজেই আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত হন। শুরু করেন বাঁশ-বেতের শিল্পের কাজ। এর ওপর নির্ভর করেই এখন চলছে তার পরিবারের জীবন জীবিকা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে দোয়ারাবাজার উপজেলার শরীফপুর ব্রিজের গোড়ায় দাঁড়িয়ে ক্রেতাদের সাথে দরদাম হাঁকতে দেখা গেছে কারিগর অঞ্জলি দেবনাথকে। তার সামনে বাঁশ-বেতের শিল্পের বিভিন্ন জিনিসের পসরা সাজানো। স্থানীয়ভাবে একেকটার একেক মুখরোচক নাম। হাইঙ্গা, টুকরি, খাঁচা, পাতি, কোলা, পাতলা, চাটাই ইত্যাদি। সবকটিই স্থানীয়ভাবে বাঁশ ও বেতের তৈরি। আলাপকালে অঞ্জলি দেবনাথ এ প্রতিবেদককে জানান, বাড়িতে বসে নিজেই এসব তৈরি করেন দেশীয় পদ্ধতিতে। বাঁশ বেতের এসব জিনিস পাইকারি ও খুচরা দামে বিক্রি হয়। সম্প্রতি বাজার তেমন ভালো যাচ্ছে না। বাজারে ক্রেতা-দর্শনার্থীর আনাগোনা তেমন নেই, মাঝেমধ্যে দু’একজন এসে দেখে যাচ্ছেন, অনেকে দাম হাকিয়ে ক্রয় না করেই চলে যাচ্ছেন।
ক্রেতা সংকট থাকায় অঞ্জলি দেবনাথের মতো আরো কয়েকজন বাঁশবেতের শিল্পী ও বিক্রেতাকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। ব্যবসার আয় কমেছে তাদের। ফলে অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন স্বল্প আয়ে সংসার চালাতে। অনেকে আবার পাল্টেছেন পেশা।
উপজেলার রাজনপুর গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব বয়সী জাহির আলী বলেন, ৫ বছর ধরে এই পেশায় আছি। গ্রাম থেকে পাইকারি দামে এসব জিনিস ক্রয় করে বিভিন্ন হাটে খুচরা ধরে বিক্রি করি। করোনা ও বন্যার কারণে এখন বাজারে তেমন ক্রেতা নেই। তিনি বলেন, লক ডাউনের সময় বেচাকেনা পুরোপুরি বন্ধ ছিলো। এখন হাটে জিনিস নিয়ে এসেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। সারাদিন বসে থেকে অর্ধেক মালও বিক্রি করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় কারিগররা বাঁশ-বেতের পণ্য তৈরিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
বিক্রেতারা জানান, বাজারের দরদামের তারতম্য অনুসারে একেকটি হাইঙ্গা সর্বোচ্চ ১২০ টাকা, পাতি ৬০ টাকা, খাঁচা ৮০ টাকা দামে বিক্রি করা যায়। আগে গড়ে দৈনিক ৫০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত মালামাল বিক্রি করা যেতো হাটবাজারে। এখন ৩০০-৫০০ টাকার বেশি বিক্রি করা যায় না। এই টাকা দিয়ে সংসার চলেনা। অন্য কোনো কাম কাজ করতে পারিনা। তাই এসব নিয়েই ক্রেতাদের অপেক্ষায় বিভিন্ন হাটবাজারে বসে থাকি।
নৈনগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মনির উদ্দিন বলেন, চাটাই নিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। কোনো ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। বিক্রি না করতে পারলে বাড়িতে তরিতরকারি কিনে নিয়ে যেতে পারবো না। ধারদেনা করতে হবে।
খাঁচা ক্রয় করতে আসা মফিজ উদ্দিন বলেন, তুলনামূলকভাবে বেশ কম দামেই কয়েকটি খাঁচা কিনেছি। করোনা লকডাউনে এমনিতেই সবাই হাঁপিয়ে উঠেছে। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই বিপাকে পড়েছে। এবার বাজারে শুধু ক্রেতা নয়, বিক্রেতার উপস্থিতিও কম। আগে আরও বেশি জিনিস উঠতো। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্রেতারা আসতেন এখানে।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com