বিশেষ প্রতিনিধি ::
শান্তিগঞ্জ উপজেলার নবনির্মিত উপজেলা খাদ্যগুদামঘর চালুর আগেই একটি প্রতিরক্ষা দেয়ালের একাধিক জায়গায় ফাটল সৃষ্টি হয়ে হেলে পড়েছে। ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী কাজ না হওয়া এবং নিম্নমানের নির্মাণ উপকরণ ব্যবহারের ফলে এটা হয়েছে বলে মনে করছেন নির্মাণের সঙ্গে জড়িত অভিজ্ঞ লোকজন। এ ঘটনায় খাদ্য অধিদপ্তরের উচ্চতর একটি টিম পরিদর্শন করেছে করেছে বলে জানা গেছে। তারা নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে ভেতরে আরেকটি প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলার উজানীগাঁও সেতুর পূর্ব পাশে দেখার হাওরে ১০০০ মে.টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি নতুন খাদ্যগুদাম নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়। ইতোমধ্যে গত জুন মাসে নির্ধারিত সময় চলে গেছে। মেসার্স নির্মাণ বিল্ডার্স এন্ড বিজনেস নামের একটি প্রতিষ্ঠান ওই কাজ বাস্তবায়ন করছে। খাদ্যগুদামের পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তার কার্যালয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ভবন, ১টি অফিস ভবন, প্রতিরক্ষা দেয়ালসহ খাদ্যগুদাম নির্মিত হয়েছে। ইতোমধ্যে গত জুন মাসে কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করতে পারেনি। এখন কাজ শেষ হওয়ার আগেই প্রতিরক্ষা দেয়াল হেলে পড়ায় পুরো ভবনের কাজ নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। এই কাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
সরেজমিন গত মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, খাদ্যগুদামের পশ্চিমের প্রতিরক্ষা দেয়ালের একাধিক জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। পুরো দেয়ালটি পশ্চিম দিকে হেলে আছে। ভিতরে প্রবেশ করে দেখা গেল দেয়ালের পাশের মাটিও দেবে যাচ্ছে। তাই অন্য প্রতিরক্ষা দেয়ালগুলোও হুমকিতে রয়েছে। যে কোন সময় ওই দেয়াল ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে এই বিষয়টি নজরে আসার পর গত ৫ সেপ্টেম্বর খাদ্য অধিদপ্তরের একটি পরিদর্শন দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে পুরো দেয়াল নতুন করে নির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ওই দেয়াল রেখেই ভিতরে আরেকটি প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে ওই সময় দেখার হাওরে মাছ ধরছিলেন মৎস্যজীবী আলাই। তিনি বলেন, ‘ইকানো মালামাল যা ব্যবহার অইছে বেশিরভাগই আছিল দুই নম্বর। ইতার লাগি ওয়াল হেইল্যা পড়ছে। পরীক্ষা খরলে বিল্ডিংগেও দুই নম্বরী ধরা পড়বো’। তার মতো উপস্থিত আরো অনেকেই একই কথা বলেছেন।
মেসার্স নির্মাণ বিল্ডার্স এন্ড বিজনেস এর পরিচালক শরাফত হোসেন বলেন, আমরা ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী যথাযথভাবে কাজ করেছি। ভালো নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করেছি। পশ্চিমের প্রতিরক্ষা দেয়ালটি বর্ষায় হাওর ও গভীর খালের কিনারে করা হয়েছিল। তাই অতিবৃষ্টিতে একটি দেয়াল হেলে পড়েছে। তিনি বলেন, পাইলিং করে করা হলে এমন হতোনা। কিন্তু ওয়ার্ক অর্ডারে পাইলিং ছিল না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিন পরিদর্শন করে আবারও ওই দেয়ালের ভিতরে আরেকটি প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা যেহেতু হস্তান্তর করিনি তাই আরেকটি প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করে দেব। এ জন্য সময়ও বাড়ানো হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নকীব সাদ সাইফুল ইসলাম বলেন, শান্তিগঞ্জ উপজেলার নবনির্মিত খাদ্যগুদামটি এখনো হস্তান্তর হয়নি। এর মধ্যেই পশ্চিমের প্রতিরক্ষা দেয়ালে ফাটলসহ হেলে পড়েছে। আমরা নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে প্রতিরক্ষা দেয়ালটি পুননির্মাণ করে দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। খাদ্য বিভাগের একটি টিমও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছে।