বিশেষ প্রতিনিধি ::
তাহিরপুর সীমান্তের ওপারে পাহাড় ধসের পর ঢলের পানির সাথে নেমে আসা বালু-পাথরের নিচে চাপা পড়ে গেছে হাজার একর কৃষিজমি। নষ্ট হয়েছে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, গাছপালা। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার মানুষেরা বছরের পর বছর মানবেতর জীবনযাপন করলেও নেওয়া হচ্ছে না পুনর্বাসনের উদ্যোগ।
এমন পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষতিপূরণের পাহাড় ধসের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনার কৌশল নির্ধারণে আন্তরাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি স্থানীয়দের।
জানা যায়, ভারিবর্ষণের কারণে প্রায় প্রতিবছর পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে ভারতের মেঘালয়ে। ঢলের পানির সাথে বিপুল পরিমাণ বালু-পাথরে এসে পড়ে কৃষি জমিতে। বিগত একযুগে বালু-পাথরের নিচে চাপা পড়ে হাজার একর কৃষিজমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী চাঁনপুর-রজনীলাইন এলাকায় দুই শতাধিক পরিবার প্রায় নিঃস্ব।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চলতি বর্ষায়ও পাহাড় ধসের বড় ঘটনা ঘটেছে সীমান্তের ওপারে। কৃষিজমিতে বালু-পাথর মিশ্রিত ঢলের পানি এসে এবারো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাড়িঘর, গাছপালা। এক সময়ের সবুজ শ্যামল ধানী জমির মাঠ এখন ধু ধু বালুচর। চাষবাসের অনুপযুক্ত জমিজমা হয়ে পড়েছে কৃষকের গলার কাঁটা।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষাণী মিনারা খাতুন বলেন, ‘ঢলের পানির লগে বালু পাথর আইয়া ঘরবাড়ি, খেতকৃষি নষ্ট কইরা ফালাইছে। খেতের জমি বালুর তলে চইল্যা যাওয়ায় আমরা খেতকৃষি করতে পারতেছি না। এখন আমাদের চলবার কোনও ভাও নাই।’
কৃষক রুকম উদ্দিন বলেন, ‘আগে প্রতি কিয়ার জমিতে (৩০ শতক) বছরে দুইবার ১৫ মণ করে ধান পাইতাম। বালু পড়ে জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এক ছটাক ধানও পাই না। গৃহস্থ পরিবারগুলো এখন গরিব। জমিতে ঘাস না গজানোয় গরু-বাছুরও পালতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে পুনর্বাসন না করলে সন্তানসন্ততি নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।
স্থানীয় উত্তর বড়দল ইউনিয়নের সদস্য মো. সম্রাট মিয়া বলেন, পাহাড় ধসের বিপর্যয় থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা পেতে পাহাড়ি খাল-নালা খননের কোনও বিকল্প নেই। ঢলের পানি নিচে নামার পথ না থাকায় এসে কৃষিজমিতে পড়ে।’
সম্প্রতি পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা-সহ কয়েটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার নেতৃবৃন্দ চাঁনপুর-রজনিলাইন এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলেন।
বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শাহেদা আক্তার বলেন, সরকারের উচিত হবে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা এবং তাদেরকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা। সেইসাথে ক্ষয়ক্ষতি কিভাবে কমিয়ে আনা যায় তার একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু ভারতের পাহাড় ধসের কারণে এই পরিস্থিতি, তাই এক্ষেত্রে একতরফা কিছু সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আন্তঃরাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজন।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঢলের পানিতে আসা বালু দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করে কৃষিজমি পুনরুদ্ধারের উদ্যোগের নেওয়া হয়েছে। ঢলের সাথে আসা বালু পরিমাপ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। তারা বালুর মূল্য নির্ধারণ করে দিলে আমরা নিলামে সেগুলো বিক্রি করে কৃষিজমি পুনরুদ্ধার করব। তিনি আরও বলেন, ভারি বৃষ্টিপাত হলে ভারত থেকে পানির সাথে বালু, মাটি আসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অতীতের নদী, খালের প্রবাহ থাকায় সেগুলো পানির সাথে ভেসে যেত। কিন্তু এখন নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় বালু গিয়ে কৃষি জমিতে পড়ে। এই বিষয়টি আমাদের পক্ষে মিমাংসা করা সম্ভব হবে না। এটি আন্তরাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনার বিষয়।