বিশেষ প্রতিনিধি ::
পর্যটকদের জন্য তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর সর্বাধিক জনপ্রিয় স্পট। শুধু টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণই নয় পর্যটকরা ভিড় করেন শহীদ সিরাজ লেক, লাকমাছড়া, বারেক টিলা, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগানসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে। তবে টাঙ্গুয়ার হাওরের নৌকা ভাড়া নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের। টাঙ্গুয়া ভ্রমণের অন্যতম বাহন নৌকা। সেই নৌকা ভাড়া নিয়ে রীতিমতো ভোগান্তিতে পড়তে পর্যটকদের। সুযোগ বুঝে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে নেয় অনেক নৌ মালিক ও মাঝিরা। তাদের অতিরিক্ত ভাড়া দাবির কাছে অনেকটা অসহায় বোধ করেন পর্যটকরা।
পর্যটকদের অভিযোগ, নৌযান মালিক ও চালকরা সিন্ডিকেট করে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে নেয়। স্থানীয় প্রশাসনের নির্ধারিত ভাড়াকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা দ্বিগুণ ভাড়ায় আদায় করছে।
জানাযায়, বিজেন ব্যানার্জি তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকালে পর্যটকদের সুবিধা জন্য নৌযান শ্রমিক ও মালিকদের নিয়ে বৈঠকের পর ভাড়া নির্ধারণ করে দেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়- একদিন (ন্যূনতম ৮ ঘণ্টা হতে ১২ ঘণ্টা) ২০ জন পর্যটক নিয়ে ৩ হাজার টাকা, ৩০ জন পর্যটক নিয়ে ৪ হাজার ৫শত টাকা এবং ৪০ জন পর্যটক নিয়ে ৬ হাজার টাকা। এছাড়া দুই দিন একরাত ২০ জন পর্যটক নিয়ে ৬ হাজার টাকা, ৩০ জন পর্যটক নিয়ে ৯ হাজার এবং ৪০ জন পর্যটক নিয়ে ১২ হাজার টাকা এবং তিন দিন – দুই রাত ২০ জন পর্যটক নিয়ে ৭ হাজার টাকা, ৩০ জন পর্যটক নিয়ে ১০ হাজর টাকা এবং ৪০ জন পর্যটক নিয়ে ১৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। পরে তাহিরপুর বাজারের পাশে মূল খেয়াঘাটের সামনে সাইনবোর্ড ও তাহিরপুর থানা সামনে বৌলাই নদীর দুই তীরে দুটি সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সাইনবোর্ড লাগানো হয়। তবে কয়েকদিন পর দুর্বৃত্তরা মূল খেয়াঘাটের সাইনবোর্ড ভেঙে মাটিতে ফেলে রাখে। যা এখনও ভাঙা অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে, মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা প্রশাসনের ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও তা মানছেন না নৌযান মালিক ও চালকরা। তারা নিজেদের ইচ্ছেমত নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন। ইতোমধ্যে টাঙ্গুয়ার হাওরের ভাড়া নিয়ে অনেকেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগও করেছেন। এদিকে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নানা সমালোচনা ঢাকতে তড়িঘড়ি করে গত সোমবার তাহিরপুর ট্রলার মালিক সমিতি তাদের ইচ্ছেমতো টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রবণে ছোট-বড় নৌযানের ভাড়ার তালিকা প্রকাশ করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, তাহিরপুর ঘাট হতে ওয়াচ টাওয়ার হয়ে ট্যাকেরঘাট হয়ে পুনরায় তাহিরপুর ঘাট ছোট ইঞ্জিন নৌকা (লম্বা ৩০ থেকে ৩৫ হাত) ভাড়া – ৪০০০ টাকা, বড় ইঞ্জিন নৌকা (কাঠ বডি) (লম্বা ৪০ থেকে ৪৫ হাত) ভাড়া ৮০০০ হাজার টাকা, বড় ইঞ্জিন নৌকা (স্টিল বডি) (লম্বা ৪৫ থেকে ৫০ হাত) ভাড়া ১২০০০ টাকা।
তাহিরপুর ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবিকুল ইসলাম বলেন, আমরা পর্যটকদের জন্য একটি ভাড়া নির্ধারণ করেছিলাম। কিন্তু সেটি বেশি হওয়ায় এনিয়ে আমরা আবার বসবো। এর আগে তৎকালীন ইউএনও ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন সেটাও আপনারা মানেন কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি কিছুই বলতে পারেননি।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগটি দীর্ঘদিনের। তবে গতকাল শুনেছি তাহিরপুর ট্রলার মালিক সমিতি ভাড়ার একটি তালিকা তাদের ইচ্ছেমতো প্রকাশ করেছে। আমি দুপুরে ট্রলার ঘাটে নিজে গিয়েছি। তাদেরকে নিয়ে বসে তালিকাটি পরিবর্তন করা হবে।