স্টাফ রিপোর্টার ::
হাওর-বাওরের দেশ সুনামগঞ্জ। নৌকা বাইচ এই অঞ্চলের অন্যতম লোক উৎসব। তবে গ্রামবাংলার চিরায়ত এই উৎসবটি হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্ষার শেষ দিকে গত কয়েক বছর ধরে কিছু বাইচ অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। এবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশে উৎসব হচ্ছে। এই উৎসবে আনন্দে মাতছেন হাজার হাজার মানুষ। নতুন প্রজন্ম লোকায়ত এই উৎসব দেখে আপ্লুত হচ্ছে। তাদের মধ্যে নিজস্ব সাংস্কৃতিক চেতনার সেতুবন্ধন মজবুত হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুরে মুজিববর্ষ উপলক্ষে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার শেষ হয়েছে। খরচার হাওরে তিনদিনের এই উৎসবে হারানো ঐতিহ্য আবারও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রায় ২০টি দৌড়ের নৌকা অংশ নিয়েছিল। তিনদিনের নৌকা বাইচ উৎসব দেখতে হাজার হাজার মানুষজন অংশ নেন। মঙ্গলবার বিকেলে চূড়ান্ত উৎসব শেষ হয়েছে। বিজয়ী নৌকার দলকে দেওয়া হয়েছে মুজিববর্ষের বিশেষ উপহার।
এদিকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) শান্তিগঞ্জ উপজেলার বীরগাঁওয়ে মহান মুজিববর্ষ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হবে নৌকা বাইচ। গ্রামবাসী একটি বিশেষ নৌকা বানিয়েছেন। নাম দিয়েছেন বীর বাঙলা। এই বীর বাংলা এখন মহড়া দিচ্ছে প্রতিযোগিতার। বীর বাংলার পাশাপাশি জেলা ও জেলার বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকেও দৌড়ের নৌকা আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ওই উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি। নৌকা বাইচ উপলক্ষে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে শান্তিগঞ্জ উপজেলার সর্বত্র।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হাওরাঞ্চলের কৃষিজীবী লোকজনের হাতে যখন কোন কাজ থাকেনা তখন তারা জলকেন্দ্রিক নানা অনুষ্ঠান ও আচারাদির আয়োজন করেন। নৌকা বাইচও একটি জনপ্রিয় খেলা। বিশেষভাবে লম্বাটে আকৃতির নৌকা বানিয়ে রঙিন বৈঠায় গতির তুফান তুলে বাইচের গান গেয়ে গেয়ে নৌকা চালান ‘বাইছাল’রা। একসঙ্গে বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ অন্যরকম আবহ তৈরি করে। নৌকা বাইচ নিয়ে প্রসিদ্ধ বাউল-মহাজনরাও সঙ্গীত রচনা করেছেন। এভাবে লোকায়ত বাংলার সংস্কৃতিতে নৌকা বাইচ স্থান করে নিয়েছে। এবার মুজিববর্ষ উপলক্ষে হাওরাঞ্চলে নৌকা বাইচ বিশেষভাবে আকর্ষণ তৈরি করেছে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতিতেক নৌকা বাইচ বিশেষ স্থান দখল করে আছে। গ্রামের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় এই বাইচ। কিন্তু নানা কারণে আগের মতো এগুলো হয় না। এবার মহান মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমাদের জেলায় বেশ কিছু স্থানে নৌকা বাইচের প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম বিশুদ্ধ আনন্দের পাশাপাশি তার শিকড়ের দেখা পাবে।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট বলেন, হাওরের রাজধানী সুনামগঞ্জে জলকেন্দ্রিক নানা আচারাদির সমাহার ছিল একসময়। এখন লোকায়ত উৎসব কমে এসেছে। নৌকা বাইচও আমাদের একটি জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা। আমাদের এলাকায় মহান মুজিববর্ষ উপলক্ষে আবারও বিভিন্ন স্থানে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এটা ধরে রাখা দরকার।