বিশেষ প্রতিনিধি ::
স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দুরগোড়ায় পৌঁছাতে স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নর হলেও তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিত্র পাল্টায়নি। গত দুই যুগ ধরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পদে কর্মকর্তা, কর্মচারীর পদ শূন্য। তাছাড়া এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও সামান্য রক্ত পরীক্ষাই হয়না স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে।
তাহিরপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের তিন লক্ষাধিক মানুষের জন্য ১৯৭৮ সালে নির্মিত ৩১শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। চিকিৎসাসেবা আরও এগিয়ে নিতে ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ৫০শয্যাবিশিষ্ট নতুন ভবন উদ্বোধন করেন। কিন্তু উদ্বোধনের তিন বছর পার হলেও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি ও লোকবল নিয়োগ না দেয়ায় উন্নীতকরণের সুফল পাচ্ছে না উপজেলাবাসী।
সরেজমিনে হাসপাতাল গিয়ে জানাযায়, উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার দিয়ে চালানো হচ্ছে জরুরি বিভাগ। গাইনি চিকিৎসক না থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে প্রসূতি মায়ের চিকিৎসা সেবাসহ অন্য রোগাক্রান্ত নারীদের চিকিৎসাসেবা। রয়েছে আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের অভাব। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির মোট ১২৪ পদের বিপরীতে ৬৮ পদই শূন্য। প্রধান কর্মকর্তা ছাড়া আবাসিক চিকিৎসক, মেডিসিন, গাইনি, সার্জারি ও এনেস্থেসিয়া চিকিৎসকের পদগুলো খালি দুই যুগের বেশি সময় ধরে। ১৩জন চিকিৎসকের বিপরীতে রয়েছেন ৬ জন। এর মধ্যে প্রেষণে রয়েছেন দুইজন মেডিকেল অফিসার। তাছাড়া ২০জন নার্সের মধ্যে কমর্রত আছেন ৯জন। তৃতীয় শ্রেণির ৭১জন কর্মচারীর বিপরীতে রয়েছেন ৩৬জন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট মোকাবেলা করা হচ্ছে আউটসোর্সিংয়ের ১৮জন কর্মচারীর মাধ্যমে। গত দুই যুগের বেশি সময় ধরে ল্যাব টেকনোলজিস্ট, রেডিওগ্রাফার পদ শূন্য থাকায় কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না। ৭ বছর পূর্বে একটি এক্সরে ও ডেন্টাল মেশিন আনা হলেও একটি ঘরের ভেতরে থেকে এগুলো বিকল হচ্ছে। গত ১৭বছর যাবৎ নষ্ট হয়ে পড়ে আছে ৩টি জেনারেটার। নৌ অ্যাম্বুলেন্সটিও অকেজো হয়ে পড়ে আছে। প্রতিমাসেই চাহিদা পাঠানো হলেও দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীনতায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। আর ভোগান্তি বাড়ছে জনসাধারণের।
হাওরবেষ্টিত দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের মানিকখিলা গ্রামের মুক্তা বেগম বলেন, হাসপাতালে জ্বর নিয়ে এসে রক্ত পরীক্ষা করাতে পারেনি। বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সময় নষ্ট করে পরীক্ষা করাতে হয়েছে। গাইনি চিকিৎসক না থাকায় আমরা চরম দুর্ভোগে আছি।
উপজেলা সদর থেকে ২০কিলোমিটার দূর উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের বাগলী থেকে চিকিৎসা নিতে আসা হোসেন মিয়া জানান, ছেলেটা পড়ে গিয়ে হাত ফুলে গিয়েছিল হাসপাতালে এসেছিলাম। এক্সরে মেশিন না থাকায় ১০কিলোমিটার দূরে বাদাঘাট বাজারে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে পরীক্ষা করাতে হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার সৈয়দ আবু আহমদ শাফী বলেন, লোকবল সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন চালু করা হচ্ছে না। টেকনিশিয়ান না থাকার কারণে রক্ত পরীক্ষার করা সম্ভব হচ্ছে না। আমি যোগদান করার পরই শূন্য পদগুলোর বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান উন্নতির জন্য প্রতিটি শূন্য পদে নিয়োগ দিয়ে সুচিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো।