মো. আমিনুল ইসলাম ::
শহরের মল্লিকপুর এলাকার আব্দুজ জহুর সেতু দিয়ে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহন মালিক – শ্রমিকদের মধ্যে বিরাজ করছিল উত্তেজনা। ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, লেগুনা বা হিউম্যান হলারসহ অন্যান্য যাত্রীবাহী যান চলাচল নিয়ে দুই পাড়ের শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে চলছিল বিরোধ। এ অবস্থা বিবেচনা করে উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেছেন জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম। সকলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তিনি দুই পাড়ের পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে সৃষ্ট জটিলতার অবসান ঘটিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সেতুর উভয়পাড়ের পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। এ সময় জটিলতা কাটিয়ে উঠতে সকলের মতামত নিয়ে আব্দুজ জহুর সেতুর পশ্চিমপাড়ে সকল ধরনের যানবাহনের জন্য একটি স্ট্যান্ড নির্মাণের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এ স্ট্যান্ড নির্মাণের জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সে কমিটিতে একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, একজন সহকারি কমিশনার (ভূমি), একজন এজিএম, একজন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে রাখা হয়েছে। এ কমিটি আগামী দশ দিনের মধ্যে এলাকা পরিদর্শন করে স্ট্যান্ড নির্মাণের জায়গা নির্বাচন করে জেলা প্রশাসকের কাছে রিপোর্ট জমা দেবে।
এর আগে আলোচনা সভায় সেতুর পূর্ব পাড় ও পশ্চিম পাড়ের পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা আলোচনা করেন। তারা নিজ নিজ বক্তব্যে তাদের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ অবস্থার উল্লেখ করেন এবং এজন্য একটি স্ট্যান্ড নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানান।
এসময় পশ্চিম পাড়ের পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল। তারাও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে উভয় পাড়ের সকলের সমন্বয়ে ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে সকল ধরনের পরিবহনের জন্য একটি স্ট্যান্ড নির্মাণের দাবি জানান।
পূর্ব পাড়ের পরিবহন শ্রমিকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন আ.লীগ নেতা মোবারক হোসেন, ইমা-লেগুনা-সুজুকি-সিএনজি অটোরিকশা -হিউম্যান হলার মালিক সমিতির চেয়ারম্যান তাজিদুর রহমান সাজু, ইমা – লেগুনা- সুজুকি- হিউম্যান হলার শ্রমিক ইউনিয়নের প্রাক্তন সভাপতি আব্দুল আহাদ খাদিম। তারা পশ্চিম পাড়ের অবৈধ মোটরসাইকেলের সঙ্গে একত্রে চলাচল করতে পারবেন না বলে বক্তব্য উপস্থাপন করলেও যাত্রী হয়রানি কমিয়ে আনার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন। তারাও জরুরি ভিত্তিতে একটি যানবাহনের স্ট্যান্ড নির্মাণের জন্য জোর দাবি জানান। এসময় পূর্ব পাড়ের পরিবহন মালিক শ্রমিকদের পক্ষে রুনু মিয়া উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় পশ্চিম পাড়ের মোটরসাইকেল শ্রমিকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন আরো দুইজন শ্রমিক নেতা।
তবে সকল জটিলতার অবসান ঘটাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্রিজের পশ্চিম পাড়ে সকল ধরনের যানবাহনের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড নির্মাণের সিদ্ধান্ত দেন জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম। এ সিদ্ধান্তের প্রতি আলোচনায় অংশ নেয়া উভয়পাড়ের সকলেই সমর্থন জানান। পরে জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম তাৎক্ষণিকভাবে একটি কমিটি করে দেন। এ কমিটিতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারি কমিশনার (ভূমি) সুনামগঞ্জ সদর, এজিএম সুনামগঞ্জ ও একজন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে রাখা হয়েছে বলে জানানো হয়। এ কমিটি আগামী ১০ দিনের মধ্যে এলাকা পরিদর্শন করে স্ট্যান্ড নির্মাণের জায়গা চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসকের কাছে রিপোর্ট প্রদান করবে।
জেলা প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বলেন, কোনভাবেই যাত্রী হয়রানি মেনে নেয়া হবে না। যাত্রী কোন বাহনে উঠবে সেটা যাত্রীর ব্যাপার। যাত্রীকে নিয়ে কোনভাবেই টানা হেঁচড়া করা যাবেনা। যারা এমন কাজ করবেন তাদের ব্যাপারে অ্যাকশনে যাবে প্রশাসন। পূর্ব পাড়ের যানবাহন ব্রিজ পার হয়ে যাত্রীদেরকে স্ট্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছে দিবে। যাত্রীরা যেনো ভোগান্তির শিকার না হন সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। কারণ আপনাদের সকলের উদ্দেশ্যই মূলত যাত্রীসেবা। একে অন্যের প্রতি বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক না রেখে আসুন সকলে মিলে যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে কাঁধে কাঁধ মিলাই। আর লাইসেন্স ছাড়া কোনভাবেই আগামী একমাস পরে কেউ যানবাহন চালাতে পারবেন না। আমরা যাকেই পাবো তার বিরুদ্ধেই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমরা সকলে মিলে সুন্দর সুনামগঞ্জ গড়ে তুলতে চাই। এতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। শান্তির শহর কখনোই অশান্ত হয়ে উঠুক তা আমাদের কারো কাম্য নয়। তাই যাতায়াত নিরাপদ করতে ও যাত্রীসেবার মান উন্নয়নে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাবেরা আক্তার, জেলা পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশিদ, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান সুলেমান তালুকদার।
আলোচনা যাত্রী পরিবহনের বর্তমান অবস্থা ও জটিলতার সমাধান বিষয়ে আলোচনা করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খান মো. ফারুক, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. তালুত, সদর মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মো. মাসুক আলী, বিশ্বম্ভরপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদুর রহমান, জামালগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান, তাহিরপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহ।
সভায় বিআরটিএ কর্মকর্তাসহ সেতুর উভয় পাড়ের পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।