বিশেষ প্রতিনিধি ::
ছাতক পৌরসভার এক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরে বিরুদ্ধে ওঠা চাঁদাবাজির অভিযোগ আমলে নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করার পর মেয়রের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা করেছেন ওই কাউন্সিলর। মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ছাতক পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে এ মামলাটি দায়ের করা হয়। এর আগে ওই নারী কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে পৌর চাঁদা আদায়ের অভিযোগ এনে মেয়রের নিকট লিখিত আবেদন করেন কয়েজন ইজিবাইক চালক। অভিযোগের ব্যাপারে পৌর পরিষদের সভায় নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন হয়। পরে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মেয়র বনাম নারী কাউন্সিলেরর মধ্যে এই পাল্টাপাল্টির ঘটনায় জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
জানা যায়, ছাতক পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক থেকে স্থানীয় নারী কাউন্সিলর ও তার স্বামী চাঁদা আদায় করছেন মর্মে গত ১৮ আগস্ট মেয়রের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ করেন ইজিবাইকচালক আতিকুল মিয়া, নূরুল হোসেন ও বিরাজ আলী। ২২ আগস্ট অনুষ্ঠিত পৌর পরিষদের বিশেষ সভায় বিষয়টি উত্থাপন করে উপস্থিত ১১ সদস্যের মধ্যে ১০ জনের সম্মতিতে ওই নারী কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিন্তু চাঁদাবাজি বন্ধ না হওয়ায় ২৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত পরিষদের অপর এক সভায় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় পৌর পরিষদ। সেইসাথে তিনিসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় পরিষদের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের সিদ্ধান্তও গৃহীত হয় সভায়। ২৬ আগস্ট নারী ওই কাউন্সিলর, তার স্বামীসহ চার জনকে আসামি করে ছাতক থানায় মামলা দায়ের করেন পৌরসভার অফিস সহায়ক দীপ্ত বণিক।
পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, অভিযুক্ত নারী কাউন্সিলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ ও মামলা দায়ের সিদ্ধান্তও গৃহীত হওয়ার পর সভা শেষে পৌরসভা অফিসে তুলকালাম কাণ্ড ঘটান ওই নারী কাউন্সিলর এবং তার স্বজনরা। পৌর মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তিনি।
আদালত সূত্র জানায়, ২২ আগস্ট অনুষ্ঠিত পৌর পরিষদের সভা শেষে পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী ওই নারী কাউন্সিলরকে তার অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে অনৈতিক প্রস্তাব ও যৌন হয়রারনি করেছেন, এমন অভিযোগ এনে মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ওই নারী কাউন্সিলর। প্রভাবশালী মেয়র তার সঙ্গে বৈরী আচরণ ও ন্যায্য অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করার অভিযোগও এজাহারে আনেন তিনি।
বাদীর আইনজীবী আমিরুল হক জানান, অভিযোগ তদন্তপূর্বক আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন।
ছাতক পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, ওই নারী কাউন্সিলর ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে ইজিবাইক চালকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করছেন। তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ ও পৌর পরিষদের সভার সিদ্ধান্তই প্রমাণ অভিযোগের সত্য-মিথ্যা প্রমাণ করবে।