রাজন চন্দ ::
ভারতের মেঘালয় থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের বালু-পাথরে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকার ট্যাকেরঘাট-চাঁনপুর-বারেকটিলা সড়কের একাধিক জায়গা ভেঙে গিয়ে খালে পরিণত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের বালু-পাথরে রাস্তাঘাট ছাড়াও সীমান্ত এলাকার কৃষি জমি বিনষ্ট হওয়াসহ অনেক ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন সেখানের প্রায় শতাধিক পরিবার।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, ২০০৭ সাল থেকে ভারতের মেঘালয় থেকে আসা ঢলের পানিতে বালু-পাথরে স্থানীয় ছড়াগুলো (পানি নিষ্কাশনের ছোট পথ) ভরাট হয়ে যায়। ফলে বিগত কয়েক বছরের ঢলে আসা বালি পাথরে কৃষি জমি ভরাট সহ রাস্তাঘাট ভেঙে যেতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় এমপি ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত দিয়েছেন।
স্থানীয় ভুক্তভোগী লোকজন জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলে মেঘালয় পাহাড় থেকে বালু-পাথর নেমে আসে। এভাবে তাহিরপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের কৃষিব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চলতি মাসে কয়েক সপ্তাহের টানা বর্ষণে পাহাড়ি ঢল তীব্র স্রোত হয়ে ওই এলাকা দিয়ে নামে। এতে ট্যাকেরঘাট-চাঁনপুর ও রজনী লাইনের প্রায় ৫০০ মিটার পাকা সড়ক স¤পূর্ণ বিলীন হয়ে বর্তমানে খালে রূপ নিয়েছে। ফলে বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলি শুল্কস্টেশনে যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। এ সড়ক ব্যবহার করেই স্থানীয়রা মোটরসাইকেল, ট্রলি, অটোরিকসায় যাতায়াত করেন।
এদিকে গত সপ্তাহে ঢলের পানিতে ভেঙে যাওয়া বসতভিটা ও বিপর্যস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলতে সরেজমিনে পরিদর্শনে যান তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল ও তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান কবির।
উত্তর বড়দল ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. সম্রাট মিয়া বলেন, পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়াসহ অনেক কৃষি জমি বিলীন হয়ে গেছে। বিষয়টি আমরা সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট অবগত করেছি।
উত্তর বড়দল ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ স¤পাদক আব্দুল মোতালিব বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরেই পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভেসে আসা বালু-পাথরে রাস্তাঘাটসহ কৃষি জমি বিলীন হওয়া শুরু হয়েছে। আমরা প্রতিবছরই সমস্যাটি সমাধানের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দপ্তরে জানালেও আজ পর্যন্ত কোনো উদ্যেগ নেওয়া হয়নি।
চানপুর নয়াছড়া এলাকার কৃষক জয়নাল মিয়া বলেন, নিজের কিছু কৃষি জমি ছিল যেগুলো করে কোনোরকম চলতে পারতাম। কিন্তু বর্তমানে কৃষি জমি বালিতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় আমরা মহাসমস্যায় পড়ে আছি। বিকল্প কোন কাজ না থাকায় পরিবার নিয়ে এলাকা ছাড়ার চিন্তা করছি।
কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থেকে বারেকটিলায় আসা পর্যটক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ভ্রমণে এসে সীমান্ত এলাকার রাস্তার ভোগান্তিতে পড়ে গেলাম। বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা ভেঙে গিয়ে খালের মতো সৃষ্টি হয়েছে যা আমরা প্রথমে বুঝতেই পারছিলাম না।
মোটরসাইকেল চালক মাসুক মিয়া বলেন, পর্যটকদের মোটরসাইকেলে বহন করে দিনাতিপাত করি। বর্তমানে রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করা কঠিন হয়ে গেছে।
সীমান্ত এলাকার আদিবাসী সংগঠক এন্ড্রু সলেমার বলেন, ২০০৭ সাল থেকে শুরু হওয়া ভারতের পাহাড়ি ঢলের বালি-পাথরে সীমান্ত এলাকার কৃষি জমি বিরান হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ের ঢলে রাস্তা ভেঙে খালে পরিণত হয়েছে। আমি বিষয়টি সমাধানের জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে বার বার দ্বারস্থ হলেও আজো পর্যন্ত কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান কবির বলেন, পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসহ সীমান্ত এলাকায় সরেজমিনে গিয়েছি। খুব শীগ্রই বিষয়টি সমাধানের জন্য সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মহোদয় সরেজমিনে সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করবেন।
সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য আমি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলবো।