1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৯:১১ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

শ্রমের হাটে হতাশা

  • আপডেট সময় বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

পীর জুবায়ের ::
“কোন কামের লাগি চাইরা মাজন (মহাজন), বাড়ির কাজ, না বাহিরের কাজ। দেখইন আমার লগে সব আইত্তর আছে। কামে কোনো সমস্যা অইতো না। রুজ ভালা দিলে শুধু দেখাইয়া দিবাইন, আপনার সব কাম সুন্দর কইরা অইবো।”
এভাবে কথাগুলো বলছিলেন দিনমজুর বিজয় দাস। শুধু তিনি নয়, আরও প্রায় শতাধিক লোক শ্রমবিক্রি করার জন্য জড়ো হয়েছেন। আর এই শ্রম বেচা-কেনার হাটের চিত্র দেখা যায় সুনামগঞ্জ শহরের কালিবাড়ি মোড়ে। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ওই এলাকায় ভিড় জমে দিনমজুর মানুষের। যারা বিভিন্ন প্রান্তিক এলাকা থেকে প্রতিদিন কাজের সন্ধানে এখানে জড়ো হন। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের অনেকেই কাজ না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরেন।
মঙ্গলবার সকাল ৭টা। শহরের আলফাত স্কয়ার পেরিয়ে কালীবাড়ি মোড়ে দোজা শপিং সেন্টার প্রাঙ্গণে দেখাগেল কাজের সন্ধানে জড়ো হওয়া মানুষদের। তাদের সাথে কথা বলে জানাযায়, প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে শুরু করে সকাল ১০টা পর্যন্ত দর কষাকষি করে শ্রমজীবীদের শ্রম বিক্রি হয়। শহরের কালীবাড়ি পয়েন্টে ‘শ্রমের হাট’ প্রায় এক যুগ ধরে চলে আসছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ২শতাধিক শ্রমজীবী মানুষ হাটে আসছেন শ্রম বিক্রি করতে। বিভিন্ন এলাকার মানুষ বাড়ির কাজ, দোকানের কাজ, কৃষিকাজের জন্য তাদের কিনে নিয়ে যাচ্ছেন দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে। আর ক্রয় করার আগে চলতে থাকে অন্যান্য পণ্যের মতো দর কষাকষি। সকালের দিকে চাহিদা বেশি থাকে। শ্রমজীবীরা শ্রমের দামও বেশি হাঁকেন। সময় গড়িয়ে গেলে শ্রমিকের চাহিদা কমে আসে এবং দামও কমে।
স্থানীয়ভাবে শ্রমজীবীদের বলে দিনমজুর, আবার কেউ বলেন ‘কামলা’। ৬৫ বছরের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের শ্রমজীবী মানুষ কাজের সন্ধানে দলে দলে ছুটে কালীবাড়ি মোড়ের শ্রমের হাটে। এই মানুষগুলোর অধিকাংশই আশ্রয়হীন, হতদরিদ্র। কাজের ধরণ অনুযায়ী ক্রেতাদের কাছে তারা কেউ একদিন, কেউ এক সপ্তাহ, আবার কেউ কেউ এক মাসের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকেন।
কয়েকজন শ্রমজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দৈনিক ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় তারা শ্রম বিক্রি করেন। তবে শ্রম কেনা মালিকের পছন্দের ওপর নির্ভর করে মূল্য। বৃদ্ধের চেয়ে জোয়ানদের চাহিদা বেশি। অনেকে শ্রমজীবীর শারীরিক গঠন দেখেও শ্রম ক্রয় করে থাকেন।
কাজের সন্ধানে আসা জিয়া মিয়া জানান, চতুর্দিকে পানি হওয়ায় এ সময় গ্রামের বাড়িতে কোনো কাজকর্ম নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব কষ্ট আছি। তাই শহরের এই হাটে কাজের সন্ধানে ছুটে এসেছি। বউ বাচ্চার রিজিকে যদি খাবার থাকে তাহলে আমার শ্রম কিনতে কেউ আসবে। তিনি জানান, করোনাকালে কাজকর্ম কমে গেছে। তাই অনেকদিন কাজ না পেয়ে খালি হাতেই ঘরে ফিরতে হয়।
মান্নারগাঁও গ্রামের আলম মিয়া জানান, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসের প্রথম দিকে আমনের চারা রোপণের মৌসুম ছিল। এ সময় কৃষি কাজের শেষ নেই। সেসময় আমনের চারা রোপণের জন্য শ্রম কেনার ক্রেতাদের আনাগোনা ছিল বেশি এবং ভালো মজুরিতে তারা শ্রম কিনে নিতেন। এখন চাহিদা আগের চেয়ে কম।
স্থানীয়রা জানান, শ্রম কেনা-বেচার হাট থাকায় কাজের জন্য শ্রমিক সংকটে পড়তে হয় না। চাহিদা মতো দর কষাকষি করে শ্রমিক পাওয়া যায়। আর এই হাট যদি প্রচলন থাকে তবে আশপাশ এলাকার মানুষের জন্য উপকার হবে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিও দেখতে হবে। তারা যাতে ন্যায্য মূল্য পান সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com