পীর জুবায়ের ::
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। ঘরে ঘরে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা নিয়ে আসছে ১১ অক্টোবর শুরু হবে দুর্গোৎসব। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। তবে করোনা পরিস্থিতিতে প্রতিমা তৈরিতে নিয়োজিত মৃৎশিল্পীরা ভালো নেই বলে জানিয়েছেন। তারা জানান, অন্য বছর এ সময়ে দুর্গাপূজার বায়না আসতে শুরু করলেও এবার তার খবর নেই। ফলে নেই প্রতিমা গড়ার ব্যস্ততা।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের রামকৃষ্ণ আশ্রমে কাদা-মাটি, বাঁশ, খড়, সুতলি দিয়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিলতিল করে দেবীদুর্গার প্রতিমা তৈরি করছেন কারিগররা। তবে কিছু মন্দিরে প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হলেও অনেক মন্দিরে এখনো কাজ শুরু হয়নি।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন পূজার আয়োজন হয় বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে। সে হিসেবে মৃৎশিল্পীরাও তাদের কাজের হিসাব করেন বাংলা বছর অনুযায়ী। অন্যান্য বছর এই সময়ে ব্যস্ত থাকলেও তারা এখন অনেকটা অলস সময় কাটাচ্ছেন। এমন সময়ে ভাড়া করে করিগর আনতে হয়, অথচ এবার মন্দিরগুলো থেকে কাজের তাগাদা নেই।
রামকৃষ্ণ আশ্রমে প্রতিমা তৈরির কারিগর প্রফুল্ল পাল জানান, করোনাভাইরাস মহামারি তাদের সব ব্যস্ততা থামিয়ে দিয়েছে। আয়-রোজগার বন্ধ হওয়ায় ভবিষ্যৎ নিয়েও তারা শঙ্কায়। তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর এ সময় ১০-১৫টি পূজামণ্ডপে কাজ করে থাকি; এ বছর মাত্র ৪টি পূজামণ্ডপের প্রতিমা তৈরির কাজ করছি।
রাকেশ চন্দ্র পাল নামে আরেক মৃৎশিল্পী বলেন, দুর্গাপূজার কাজ দীর্ঘমেয়াদী ব্যাপার। অনেকেই তিন থেকে পাঁচ মাস ধরেও কাজ করেন। তবে এবার আমরা উভয় সংকটে আছি। যে সংকট চলছে তাতে পূজার দিনক্ষণও বেশি বাকি নয়। কিন্তু এখনও তেমন কোনো মণ্ডপ থেকে যোগাযোগ করছে না। উপস্থিত সময়ে যোগাযোগ করলে বুঝতে পারছি না আমরা কি করে সামাল দিব। তখন আমরা প্রতিমার কাজ নিয়ে আয়োজকদের বুঝিয়ে দিতে পারব না।
মহামারী করোনার কারণে গত বছর দুর্গাপূজার আনন্দ অনেকটাই ভাটা পড়ে হয়ে যাওয়ায় এবারও সন্দিহানে আছেন পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ। ফলে অনেকই মনে করছেন গত বছরের মতো এবার পূজার সেই পুরনো সংস্কৃতি অনেকটা লুকিয়ে থাকবে অগোচরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছর সারা জেলায় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৪১১টি মণ্ডপে এবং সুনামগঞ্জ পৌরসভার ভেতরে ২৩টি পূজা মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে করোনা মহামারির কারণে আয়োজকরা পরিস্থিতি বুঝে পূজা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিবেন বলে জানা গেছে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিমল বণিক দৈনিক সুনামকণ্ঠকে বলেন, করোনা মহামারির জন্য অনেক মন্দিরে এবং পূজা মণ্ডপ সন্দিহানে রয়েছে পূজা হবে কি-না। সেজন্য প্রতিমা তৈরির আমেজ দেখা যাচ্ছে না। তবে শেষ সময়ে হয়তো পূজা আয়োজনে তৎপরতা বাড়বে। তিনি আরও জানান, গত বছর করোনা মহামারির জন্য আমরা পূজায় কোনো আয়োজন করতে পারিনি। এবার যখন সবকিছু স্বাভাবিক হচ্ছে আশা করা যায় আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগের মতো শারদীয় দুর্গোৎসব আয়োজন করতে পারবো।