পীর জুবায়ের ::
“বাজান এদিকে আহো, এইডা আমার ঘর। দেখো কত্ত সুন্দর ঘর সরকারে আমগোরে দিছে। বিশ্বাস করও বাজান জিন্দেগিতে স্বপ্নেও ভাবিনি এমন ঘরের তলে বাস পাইমু। প্রধানমন্ত্রীরে ধইন্যবাদ জানাই আমরার কথা ভাবার লাগি।”
চোখে মুখে আনন্দের উচ্ছ্বাস আর সরলতার হাসি দিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ৫৫ বছরের বায়োবৃদ্ধা শরফুল বেগম।
সম্প্রতি গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের আদারবাজার সংলগ্ন সুরমা নদীর তীরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৫টি ঘরের মধ্যে একটি উপহার পেয়ে এভাবেই আনন্দে ভাসছেন তিনি।
জানা যায়, সুরমা নদীর তীরে প্রায় ২৪ একর সরকারি জমি অবৈধ দখলমুক্ত করে ওই এলাকায় একটি মডেল প্রকল্প করা হচ্ছে। বর্তমানে পাশের হরিণাপাটি ও রঙ্গারচর এলাকার ১৫ পরিবার নতুন ঘরে উঠেছে।
শরফুল বেগম এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি মাঝপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। এক ছেলে, তা-ও আবার এক চোখ নষ্ট। কাজ পেলে করে। এই অবস্থায় তিনি ভিক্ষা করে সংসার চালাতেন।
তিনি বলেন, “দিন এনে দিন খাওয়া, না হলে উপোষ থাকতাম। এই অবস্থায় থেকে আমি কখনও পাকা ঘরের চিন্তা করিনি। গ্রামে ভিক্ষা করতে গেলে কারও পাকা ঘর দেখলে আফসোস হলেও পরক্ষণে মনে হতো এটা দুঃস্বপ্ন। কিন্তু এই স্বপ্ন যে পূরণ হবে তা কল্পনার বাইরে ছিলো আমার। আমি সারা জীবন প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ এবং দোয়া করবো আল্লাহ যেন উনাকে উত্তম প্রতিদান দেন।
এসময় তিনি আরও জানান, শুনেছি এখানে খালি জায়গায় গবাদী পশু পালন করার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। বিশেষ করে গরু পালন করার জন্য সেড করে দেয়া হবে। যদি এরকম করে দেয়া হয় তাহলে আমাদের মত অসহায়রা সাবলম্বী হওয়ার পথ খোঁজে পাবে। তাছাড়া বড় স্যাররা বলেছেন আরেক অংশের খালি জায়গায় কবর স্থানের জন্য ব্যবস্থা করে দিবেন। যদি এমনটা হয় তাহলে মৃত্যু নিয়েও চিন্তা মুক্ত থাকবো।
এসময় আবেগ আপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, নিজের জায়গা নেই, জমি নেই। এক ছেলে তাও আবার এক চোখ নষ্ট। আজকাল আপনজনরাও মৃত্যুর পর তাদের জায়গায় কবর দিতে চায় না। সরকার যদি কবরস্থানের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে আর কোনো চিন্তা নাই।
শরফুল বেগম আরও বলেন, এই ঘরগুলোতে অনেক ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে আছে। এখানে যদি জেলা প্রশাসক বা এনজিও সংস্থার উদ্যোগে একটি স্কুল করে দেয়া হয় তাহলে এসব ছেলে মেয়েরা পড়ালেখার সুযোগ পাবে। ফলে তারা নিজেদের জীবন গড়ার সুযোগ পাবে। আমরা চাই এদের জীবন যেন আমাদের মত না হয়।
জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এখানে অনেক জমি আছে। এসব জমি কিছু লোক দখল করে রেখেছিল। দখলমুক্ত করে সেখানে আশ্রয়ণের একটি মডেল প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। এখানে খেলার মাঠ, শিশুপার্ক, বাজার, মসজিদ, কবরস্থান হবে। যাঁরা বসবাস করবেন, তাঁরা ধানের পাশাপাশি সবজি চাষ ও পশুপালন করতে পারবেন। একটি বেসরকারি সংস্থা শিশুদের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে পড়াশোনার ব্যবস্থা করবে।