পীর জুবায়ের ::
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে যারা অনিয়ম, দুর্নীতি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলো প্রধানমন্ত্রীর ও জাতির আবেগের জায়গা। এখানে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না। যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়ম করলেই শাস্তি পেতে হবে।
শুক্রবার (২৭ আগস্ট) সকালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের আদারবাজার সংলগ্ন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৫টি ঘরের নির্মাণকাজ পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন তিনি। সুরমা নদীতীরে প্রায় ২৪ একর সরকারি জমি অবৈধ দখলমুক্ত করে ওই এলাকায় একটি মডেল প্রকল্প করা হচ্ছে। বর্তমানে পাশের হরিণাপাটি ও রঙ্গারচর এলাকার ১৫ পরিবার নতুন ঘরে উঠেছে। আহসান কিবরিয়া প্রকল্পের ঘরগুলো ঘুরে দেখেন এবং সেখানে থাকা পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে তাদের খোঁজখবর নেন। এ সময় জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন ও অন্য কর্মকর্তারা তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এখানে অনেক জমি আছে। এসব জমি কিছু লোক দখল করে রেখেছিল। দখলমুক্ত করে সেখানে আশ্রয়ণের একটি মডেল প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। এখানে খেলার মাঠ, শিশুপার্ক, বাজার, মসজিদ, কবরস্থান হবে। যাঁরা বসবাস করবেন, তাঁরা ধানের পাশাপাশি সবজি চাষ ও পশুপালন করতে পারবেন। একটি বেসরকারি সংস্থা শিশুদের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে পড়াশোনার ব্যবস্থা করবে।
মহাপরিচালক মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকি আরও বলেন, হাওরের ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনা করে এসব ঘরের বরাদ্দ বাড়ানো হবে। মুজিববর্ষের মধ্যেই হাওরের কোনো মানুষ আর গৃহহীন থাকবে না এবং ভবিষ্যতে এসব ঘর নির্মাণে দুর্নীতির বিষয়টি একদম জিরো টলারেন্সে নিয়ে আসা হবে।
মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকি বলেন, এখনও যারা ভূমিহীন এবং গৃহহীন রয়েছে ক্রমান্বয়ে তাদের তালিকা করে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঘর উপহার দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী যে উদ্যোগ নিয়েছেন এতে দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীন ও গৃহহীনদের প্রতি আন্তরিক। তিনি তাদের কথা চিন্তা করে সব সময় আমাদের কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর যারা পেয়েছেন তাদের যেন কোনো অসুবিধা না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকি আরও বলেন, সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে নকশা ঠিক রেখে ভবিষ্যতে ঘরের কাজে কিছুটা পরিবর্তন আনা হবে এবং এতে বরাদ্দ বাড়বে।
তিনি বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশজুড়ে গৃহহীন মানুষদের দেওয়া উপহারের প্রতিটি ঘরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আবেগ জড়িয়ে আছে। তিনি গ্রামের মানুষদের ভালোবাসেন, তাঁদের সুখ-দুঃখ বোঝেন। দেশে কোনো গৃহহীন মানুষ থাকবে না, এটা তাঁর আজকের চিন্তা নয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিল, তাতে বিষয়টির উল্লেখ ছিল।
আহসান কিবরিয়া আরও বলেন, এসব ঘরের নকশা প্রধানমন্ত্রী নিজে নির্ধারণ করেছেন। তিনি এই প্রকল্পের সব খবর রাখেন। অনেকেই বলছেন, ঘরের বরাদ্দ কম। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। নকশা ঠিক রেখে ভবিষ্যতে ঘরের কাজে কিছুটা পরিবর্তন আনা হবে। এতে বরাদ্দ বাড়বে। কাজে নানা অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক নকশায়, একই বরাদ্দে হাওর, পাহাড়, সমতল সব জায়গায় কাজ হচ্ছে। সব জায়গার পরিবেশ ও পরিস্থিতি এক নয়। সারা দেশ থেকে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে। যেখানে অনিয়ম ও ত্রুটি পাওয়া গেছে, সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অত্যন্ত কঠোর। তবে অনেক জায়গায় খুব ভালো কাজ হয়েছে। অনিয়ম হয়েছে কম।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পরিদর্শনকালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আল-ইমরান রুহুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরিয়ার, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া সুলতানা, জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. রিফাতুল হক, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নিগার সুলতানা, অ্যাড. মো. আবুল হোসেন, সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মানিক মিয়া, ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হাই প্রমুখ।