1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

দুর্দশায় দিন কাটছে জেলেদের

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৫ আগস্ট, ২০২১

আশিস রহমান ::
“প্রায় ৩০ বছর ধরে এই পেশায় আছি। পানি বাড়লে আমাদের আনন্দের সীমা থাকতো না। বর্ষায় হাওরে আর বাকি সময় নদীতে মাছ ধরতাম। মাছ বিক্রির টাকায় সংসার খরচ চালিয়েও আয় থাকতো। সেই টাকা দিয়ে নতুন নৌকা, জাল ক্রয় করতাম, সন্তানদের বিয়েশাদী খরচ, ঈদ-বৈশাখের আনন্দ উৎসবের খরচের যোগান মাছ বিক্রির আয় থেকেই আসতো। সেই দিন এখন আর নাই। এখন নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। হাওরে মাছ নেই। পানিও নেই। পেটের দায়ে এই পেশায় আছি। সংসার খরচ চলে না। দিনশেষে ধারদেনা করে ঘরে চাল-ডাল নিয়ে ফিরতে হয়। দিনদিন জীবন চালানো কঠিন হয়ে আসছে।”
মঙ্গলবার দুপুরে দোয়ারাবাজারের কানলার হাওরে নৌকায় বসে জাল মেরামত করছিলেন আর প্রতিবেদকের কাছে এভাবেই নিজেদের দুর্দশার কথা বলছিলেন ষাটোর্ধ্ব বয়সী জেলে সাত সন্তানের জনক আলাউদ্দিন। তিনি দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামের বাসিন্দা। শুধু তিনি একাই নন, এবার হাওরে মাছের সংকট দেখা দেওয়ায় তারমতো অন্যান্য জেলে পরিবারেরও দুঃসময় কাটছে।
একই গ্রামের মোহাম্মদ রাসেল মিয়া বলেন, ৯ বছর ধরে এই পেশায় আছি। রোদ-বৃষ্টি, ঝড়ের মধ্যেও প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে বিকাল পর্যন্ত জাল টানতে হয়। জাল টানা অনেক কষ্ট। একা একা পারা যায় না। ৫-৭ মিলে সারাদিন একসাথে জাল টেনে হাজার খানিক টাকার বেশি মাছ পাওয়া যায় না। এই টাকা থেকে নৌকা ও জালের মালিককে ভাড়া পরিশোধ করে বাকি যে কয়টাকা থাকে তা আমরা ভাগবাটোয়ারা করি। ভাগে জনপ্রতিনিধি শ’দুয়েক টাকার বেশি পাওয়া যায় না। তেল কিনলে তরকারি কেনার টাকা হাতে থাকে না। কোনোরকমে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে।
শিমুল মিয়া ও মোহাম্মদ মিয়া বলেন, পড়াশোনা করার স্বপ্ন ছিল। আর্থিক টানাপোড়েনে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়াশোনা করে ক্ষান্ত দিতে হয়েছে। বাবার সাথে, ভাইয়ের সাথে মাছ ধরার কাজে সহযোগিতা করছি। এই পেশার কোনো ভবিষ্যত দেখতে পারছিনা। সারাদিন জাল টেনেও সামান্য মাছ পাওয়া যায় না। সংসারের খরচের যোগাতে না পেরে অনেকে পেশা পাল্টেছেন। একদিকে করোনা পরিস্থিতি অন্যদিকে হাওরে মাছের সংকট। আমাদের খবর কেউ রাখেনা। খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে।
হাওর পাড়ের জেলেরা জানান, গত কয়েক বছর ধরে হাওরে দেশী মাছের পরিমাণ কমে গেছে। দিনরাত জাল টেনেও আশানুরূপ মাছ পাওয়া যায়না। হাওরের চারপাশে এখন বাঁধ আর বাঁধ। বাঁধের কারণে বৈশাখে হাওরে পানি প্রবেশ করতে পারেনি। বৈশাখ মাসে পানির স্রোত পেলে মা মাছ ডিম ও পোনা উৎপাদন করতে পারে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে অপরিকল্পিত ফসল রক্ষা বাঁধের কারণে হাওরে পানির অবাধ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে হাওরের মাছ উৎপাদনে। অপরিকল্পিত ফসল রক্ষা বাঁধ ছাড়াও ফসলি জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ, অবাধে পোনামাছ আহরণকেও হাওরের মাছের সংকটের জন্য দায়ী বলে মনে করছেন জেলেরা।
দোয়ারাবাজার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি বর্মণ বলেন, প্রতিটি হাওরের চারপাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ দেওয়া হয়েছে। কোনো বাঁধে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা নেই। যেকারণে হাওরে দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পানির অবাধ প্রবাহ ছাড়া দেশীয় মাছের প্রজনন হয় না। এছাড়া আগে যেখানে প্রতি বছর বর্ষার শুরুতেই হাওর পানিতে টুইটুম্বুর থাকতো যেখানে এবার বর্ষাকালেও অন্যান্য বছরের তুলনায় পানি কম। এটাও দেশীয় মাছ সংকটের একটা কারণ। তাছাড়া আমাদের এদিকে পাহাড়ি ঢলের কারণে অকাল বন্যা হয়। অসময়ে অকাল বন্যার কারণেও হাওরে মাছের উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com