আশিস রহমান ::
ইরানি সিনেমার দৃশ্যের মতো। নেটওয়ার্কের খোঁজে মানুষ সেখানে পাহাড়ে ওঠে। কিন্তু দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের নূরপুর, সোনাপুর, আলীপুর, হাছনবাহার, বৈঠাখাই, টেংরাটিলাসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পাহাড় নয়, নেটওয়ার্কের খোঁজে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে। দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনায় ভুগছেন এখানকার গ্রাহকরা। দিন দিন এ বিড়ম্বনা বেড়েই চলেছে। এসব এলাকা ও এলাকার আশপাশে কোনো মোবাইল অপারেটরেরই শক্তিশালী নেটওয়ার্ক টাওয়ার নেই। যেকারণে জরুরি প্রয়োজনে কাউকে কল দিতে গেলে মোবাইল হাতে ঘরের বাইরে ছোটাছুটি করতে হয়। তবুও মিলেনা নেটওয়ার্ক। এখানকার বাসিন্দারা নেটওয়ার্কের জন্য ছোটাছুটি করতে করতে এখন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মোবাইলে কারো কল এলে কিংবা কাউকে কল করতে গেলে ঘরের বাইরে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা। ঘরের ভেতর সচল মোবাইল রাখলে কল দিয়ে সংযোগ পাওয়া যায় না, বিচ্ছিন্ন দেখায়। আবার ঘরের বাইরে বেরুলে অনেক সময় কোনোরকমে সংযোগ মিললেও কথা অস্পষ্ট শোনা যায়। বুজা যায়না। কখনো কথা বলা অবস্থায় আপনাআপনি লাইন কেটে যায়। এমনকি টেলিকমিউনিকেশনসহ ইন্টারনেট সংযোগেও রয়েছে দুর্ভোগ!
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এখানকার সিংহভাগ গ্রাহক গ্রামীণ ফোন মোবাইল অপারেটর ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা সবাইকে ভোগান্তিতে ফেলেছে। বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেতে সরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক ছাড়াও বাংলালিংক, রবিসহ একাধিক বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর ব্যবহার করছেন অনেক গ্রাহক। এরপরেও নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা পিছু ছাড়ছেনা তাঁদের। বিকল্প উপায় না থাকায় নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সবাইকে।
নূরপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রউফ বলেন, বিকল্প উপায় না থাকায় বিপদে পড়ে মোবাইল ব্যবহার করি। কল দিলে সংযোগ পাওয়া যায় না। কোনোরকমে সংযোগ পাওয়া গেলেও কথা বুঝা যায় না। আমরা যে কী একটা অসুবিধার মধ্যে আছি তা কেবল আমরাই জানি। ছিটমহল কিংবা সীমান্ত এলাকায়ও এরচেয়ে ভালো নেটওয়ার্ক মিলে।
একই গ্রামের বাসিন্দা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুস শাকিব শান্ত বলেন, যখনই বাড়িতে আসি তখন সবসময়ই বাড়তি টেনশনে থাকতে হয়। প্রায়ই অনলাইনে ক্লাস চলে। ক্লাস করার সময় ল্যাপটপে ঠিকমতো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। বিকল্প কোনো ধরনের সুবিধা না থাকায় মোবাইল ডাটা ব্যবহারই একমাত্র পথ। নেট না থাকায় ক্লাস শুরু হলে ল্যাপটপ ও মোবাইল ডিভাইস নিয়ে রাস্তার পাশে, খোলা জায়গায় বা উঁচু কোনো জায়গা খুঁজে বসে পড়াশোনা করতে হয়।
সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা সেবুল আহমেদ বলেন, মোবাইল নেওয়ার পর এই একটা দিন মোবাইলে কোথাও কল দিয়ে শান্তি পেলাম না। কল দিলে সংযোগ মিলেনা, সংযোগ মিললে কথা বলা যায়না। গ্রাহক সেবা নামে মোবাইল অপারেটররা আমাদেরকে চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে।
টেংরাটিলা গ্রামের বাসিন্দা সজীব মাহমুদ বলেন, বাড়িতে ঘরে বাইরে কোথাও নেট পাওয়া যায়না। বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী কিংবা আত্মীয়স্বজন প্রয়োজনে যখন কল দেয় তখনই সংযোগ বিচ্ছিন্ন দেখায়। কাস্টমার কেয়ারে বার বার কল দিয়ে অভিযোগ করা হলেও আজোবধি কর্তৃপক্ষ নেটওয়ার্ক সমস্যা নিরসনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রভাষক জামাল উদ্দিন বলেন, এমন দুর্বল নেট মনে হয় দেশের আর কোথাও নেই! ডেটা কিনলে ডেটা কাজ করেনা। অনলাইনে কোনো সরকারি বা অফিসিয়াল কাজ করা যায়না। অনলাইনে চাকরির আবেদন, শিক্ষার্থীদের ফরমফিলাপ এসব কাজের জন্য শহরে যেতে হয়, দুর্বল নেটওয়ার্কের জন্য এলাকায় কাজ করা যায়না। ফেসবুক ব্যবহার করতেই নদীর পাড়ে, হাওরে, খোলা মাঠে মোবাইল হাতে নিয়ে ছোটাছুটি করতে হয়।
একই গ্রামের বাসিন্দা ও দোয়ারাবাজার উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মুহম্মদ মশিউর রহমান মাস্টার বলেন, করোনাকালে আমাদেরকে অফিসিয়ালভাবে বিভিন্ন জুম মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করতে হয়। এছাড়াও অনলাইনে পাঠদান করতে হয়। নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে এসবের ব্যাঘাত ঘটছে। নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা আমাদেরকে সীমাহীন ভোগান্তিতে ফেলেছে। অবিলম্বে নেটওয়ার্ক সমস্যা সমাধান করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ বিটিসিএল অফিসের সহকারী ব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম বলেন, এসব বিষয়ে আমরা কাজ করিনা। প্রত্যেক মোবাইল ফোন অপারেটর কো¤পানিগুলো তাঁরা তাদের এসব সমস্যা নিয়ে কাজ করে।