হোসাইন আহমদ ::
পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে সুরমা নদীর পানি। এতে নতুন করে শুরু হয়েছে ভাঙন। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের একটি অংশ, আশপাশের ৩ গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার নদী ভাঙণের কবলে পড়ে অনেকের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে সুরমা নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকায় আতঙ্কে দিন কাটছে শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের সর্দারপুর-ধনপুর ও আমরিয়া গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবারের সহস্রাধিক মানুষের।
মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, সর্দারপুর-ধনপুর ও আমরিয়া গ্রামের প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় সুরমা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। এ ভাঙনের কবলে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ ১৪নং ধনপুর সর্দারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ও নতুন ভবন। বিদ্যালয়টি ১৯৩৫ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের একটি টিনসেড পাকা ভবনের অর্ধেক ও বিদ্যালয়ের মাঠের একটি অংশ সুরমা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের দুই পাশে প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙনে শুরু হয়েছে।
বিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী বসতবাড়ির বাসিন্দা জয়নাল মিয়া, জসিম উদ্দিন, সাদু আলী, মহর উদ্দিন, জুনা বেগম ও দিলা হোসেনদের বসতবাড়ির অধিকাংশ অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন নদীভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা।
তারা জানান, নদী ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে শিগগিরই এসব গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। এতে উপজেলার ৩ গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের সহস্রাধিক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়বে।
ধনপুর গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল মিয়া জানান, কেউ আমাদের খোঁজ খবর নেয় না। আমাদের বসতবাড়ির রক্ষায় কোন সরকারি উদ্যোগ নেই। পাশের বিদ্যালয়টিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে। নদীতে এখন প্রবল স্রোত। তাই যে কোন সময় আমার বাড়িটি বিলীন হয়ে যেতে পারে। এখন আর রাতে ঘুম আসে না।
ধনপুর গ্রামের গৃহবধূ জুনা বেগম জানান, স্বামীর বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেলে কোথায় গিয়ে থাকবো? এই ভেবে কোনো কিনারা পাচ্ছি না। সরকার যদি নদী ভাঙ্গন আটকায়, তাহলে আমাদের জান মাল বেঁচে যায়। বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেলে আমরা কিভাবে বাঁচব?
শিমুলবাক ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জিতু জানান, ধনপুর-সর্দারপুর ও আমরিয়ার একটি অংশ সুরমা নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে। ধনপুর-সর্দারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ইতিমধ্যে স্থানান্তরের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে নদী ভাঙণ কবলিত পরিবারের ভিটেমাটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ইতিমধ্যে আমি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহিত যোগযোগ করেছি এবং নদী ভাঙনের বিষয়টি অবগতও করেছি।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আনোয়ার উজ জামান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নাই। শীঘ্রই নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সামছুদ্দোহা জানান, বিষয়টি আমার এই মুহূর্তে জানা নেই। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। সরেজমিনে শিমুলবাক ইউনিয়নের ধনপুর-আমরিয়া-সর্দারপুর গ্রামের সুরমা নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।