বিশেষ প্রতিনিধি ::
দৈনিক সুনামকণ্ঠের উদ্যোগে করোনা আক্রান্ত রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি। বৃহস্পতিবার বিকেলে সুনামকণ্ঠ কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি ভার্চুয়াল উপস্থিত থেকে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, করোনার ভয়াল থাবায় সারা বিশ্বের ন্যায় আমরাও বিপর্যস্ত। করোনা সংক্রমণে সারাদেশের মতো আমাদের সুনামগঞ্জের অবস্থানও দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এই অবস্থায় একজন ব্যবসায়ী মো. জিয়াউল হক মানবিক উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, বিনামূল্যে তিনি মানুষকে অক্সিজেন সেবা দেওয়ার মহান কাজ হাতে নিয়েছেন। তাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, জিয়াউল হকের মতো সারাদেশের ব্যবসায়ীদেরকেও করোনাকালে মানুষের সেবায় এগিয়ে আসা উচিত। মন্ত্রী বলেন, এখনই আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের মানুষের সেবায় এগিয়ে আসার সময়, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সময়। সরকারের পাশাপাশি এভাবে অবস্থাসম্পন্ন ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এলে উপকৃত হবে দেশের মানুষ। মানুষ তাদের মনে রাখবে।
দৈনিক সুনামকণ্ঠের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মো. জিয়াউল হকের সভাপতিত্বে এবং সম্পাদক ও প্রকাশক বিজন সেন রায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শামস উদ্দিন, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বিপিএম, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মো. জাকির হোসেন, দৈনিক সুনামগঞ্জের ডাক সম্পাদক ও প্রকাশক, সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেরগুল আহমেদ, সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লতিফুর রহমান রাজু, সাংবাদিক শামস শামীম প্রমুখ।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, এই দুঃসময়ে এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা জিয়াউল হকের মতো উদ্যোক্তাদের মানবিক কাজে এগিয়ে আসায় অভিনন্দন জানাই। পাশাপাশি অন্যরাও এগিয়ে আসলে আমরাও সহযোগিতা করব। তিনি স্বেচ্ছাসেবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যারা এই মহতি কাজে স্বেচ্ছাশ্রমে যুক্ত হয়েছেন তাদেরকেও আমরা ধন্যবাদ জানাই। সবাই মিলেই আমরা এই দুর্যোগ মোকাবেলা করবো। তিনি স্বেচ্ছাসেবীদের সুরক্ষিত হয়ে সেবা দানের আহ্বান জানান।
সিভিল সার্জন ডা. মো. শামস উদ্দিন বলেন, অনেকেরই টাকা পয়সা আছে। কিন্তু দুঃসময়ে মানুষের সেবা করার মন নেই। কিন্তু জিয়াউল হক বরাবরই তার দানশীল মনোভাব নিয়ে সমাজের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। মানুষের কল্যাণে কাজ করায় আমরা তাকে অভিনন্দন জানাই। তিনি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এই মানবিক কাজে সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বিপিএম বলেন, আমি গত দশ বছর ধরে দেখছি জিয়াউল হক নানাভাবে সমাজের জন্য কাজ করছে। এখন করোনাকালে যে কাজটি করছে তা অত্যন্ত যুগোপযোগী ও মহৎ কাজ। পৃথিবীতে প্রাণ বাঁচানোর চেয়ে আর মহৎ কোন কাজ নেই।
স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, জিয়াউল হক সাহেব এই সময়ের পরীক্ষিত সমাজহিতৈষী মানুষ। তিনি এর আগে আমাদেরকে অটিস্টিক স্কুল ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন শাখাকে তিনি সহযোগিতা করছেন। এখন করোনায় বিপর্যস্ত মানুষকে বাঁচাতে যে কাজটি করছেন তার জুড়ি নেই। এমন মহৎ কাজের জন্য তাকে সাধুবাদ জানাই।
দৈনিক সুনামকণ্ঠের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মো. জিয়াউল হক বলেন, আমার বাবাকে ডায়ালাইসিস করাতে সপ্তাহে দুইদিন সিলেট নিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে দেখেছি করোনা আক্রান্ত মানুষ কি কষ্ট করছেন। অক্সিজেনের জন্য আমার সামনেই একজন মানুষ মারা গেছেন। এটা দেখার পর আমার ভেতর কেঁপে ওঠেছে। আমি সিদ্ধান্ত নেই সুনামগঞ্জে এসে ফ্রি অক্সিজেন সেবা চালু করবো। আপনাদের সবার সহযোগিতায় এই কার্যক্রম এগিয়ে নিতে চাই।
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দানশীল ব্যক্তিত্ব এবং দৈনিক সুনামকণ্ঠের স¤পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মো. জিয়াউল হকের ব্যক্তিগত উদ্যোগে করোনাকালে অসহায় মানুষদের জন্য এই ফ্রি অক্সিজেন সেবা চালু করা হয়েছে। ফ্রি অক্সিজেন সেবা পেতে ০১৭২৭৮২৫৩৬৭ নাম্বারে যোগাযোগ করা যাবে। ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের স্বাস্থ্যকর্মীরা সুনামকণ্ঠের এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তারা আক্রান্তদের সেবা শুশ্রƒষাসহ কিভাবে তাদেরকে অক্সিজেন প্রয়োগ করতে হবে অক্সিমিটার, সিলিন্ডার ও হাইফো অক্সিজেন কনসান্টেটরের মাধ্যমে প্রয়োগ দেখিয়েছেন। প্রশিক্ষণ পেয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা উৎসাহবোধ করেন এবং সুনামকণ্ঠের মানবিক এই উদ্যোগে করোনাকালে অসহায় রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।