:: আ স ম মাসুম ::
কিভাবে তিনি শহরের ভাই হয়ে উঠলেন জানা নেই! তবে তিনি ছিলেন পুরো শহরের সবার কাছে ভাই! এই ভাই মাফিয়া বা ডন ভাই নয়, এই ভাই সুনাগঞ্জের খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক জগতের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। শাহ আবু জাকের ভাই ফুটবল খেলতেন, সেখান থেকেই হয়তো কেউ একজন ভাই নাম শুরু করেছিলেন। তিনি আসল নাম হারিয়ে ৯০ দশক থেকেই হয়ে গেলেন ভাই, গত ৩০ বছরে জাকের নামটি হারিয়েছেন এই ভাই নামের কারণে। উচ্চতা কম ছিলো, শহরের ম্যারাডোনা ছিলেন তিনি। ফুটবলে এভাবেই তিনি মাতিয়েছেন, অনেক পরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের রেফারি কোর্স করে রেফারি হয়েছেন, ছিলেন ফুটবল প্রশিক্ষক।
খেলাধূলার বাইরে আর কিছুই ছিলোনা ভাইয়ের। উনারা প্রতিটি ভাইই ছিলেন এমন, যে যেটা করতেন অন্তপ্রাণ হয়ে করতেন। সব বড় ভাই প্রয়াত শাহ আবু তাহের ছিলেন আমাদের ছোটবেলা রেডিওতে শুনা ‘হা ভাই’ খ্যাত মাজহারুল ইসলাম! তাহের ভাইয়ের গলা ছাড়া শহরে মাইকিং হতো না, রাজনৈতিক থেকে মৃত্যু সংবাদ সবকিছুই ছিলো তাহের ভাইয়ের মাইকিং, তারপর শাহ আবু নাসের ভাই ছিলেন নাটক পাগল, তাহের ভাই আর নাসের ভাই মিলে বছরে ১টি নাটক নামাতেন শহরের শহীদ আবুল হোসেন মিলনায়তনে। এই পরিবারটি সুনামগঞ্জ শহরের মানুষকে নাটকে, মাইকিংয়ে, খেলাধূলায় মাতিয়ে রেখেছেন অন্তত ৩৫/৪০ বছর!
শহরের প্রথম খেলাধূলার আধুনিক দোকান করলেন ভাইসহ আরো কয়েকজন ক্রীড়ামোদী। সম্ভবত বাংলাদেশ আইসিসি চ্যা¤িপয়ন হওয়ার বছরই। ৩ জন পার্টনার থাকলেও বিআরটি স্পোর্টস হয়ে উঠেছিলো ভাইয়ের দোকান!
আমাদের স্কুলের পেছনেই বাসা ছিলো, আমাদের স্কুলেই পড়াশুনা করেছেন, স্কুল লীগ খেলায় রেফারি হিসাবে আমরা পেতাম ভাইকে। ভাই অসম্ভব কড়া রেফারি ছিলেন। জীবন যাপনে ছিলেন খুব সহজ ও সরল। আজ আমাদের শহরের ভাই চলে গেলেন… এই ভাই আতঙ্কের ভাই নয়, এই ভাই ৩ দশকে ভালোবাসার ভাই… ভালো থাকেন ভাই, আপনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
[আ স ম মাসুম, লন্ডন, ২৫ জুলাই, ২০২১]