শহীদনূর আহমেদ ::
করোনা পরীক্ষার নমুনাজট কমাতে ও পরীক্ষায় গতিশীলতা আনতে সুনামগঞ্জে অত্যাধুনিক পিসিআর (পলিমেরাস চেইন রিঅ্যাকশন) ল্যাব স্থাপন হবে। এদিকে, গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের জন্য পিসিআর মেশিন বরাদ্দ করেছেন। করোনাভাইরাস শনাক্ত করার জন্য অত্যাধুনিক RT PCR (Quantstudio 7 Flex) মেশিনে একসঙ্গে ৩৮৪টি নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। জানাযায়, দাতা সংস্থা The Global Fund (TGF)-এর সহায়তায় পিসিআর মেশিনটি পাওয়া গেছে। তবে এটি দ্রুত স্থাপনই একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বিশেষজ্ঞ ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন সুনামকণ্ঠকে বলেন, সুনামগঞ্জে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য আরটি পিসিআই কোনান্ট স্টুডিও সেভেন ফ্ল্যাক্স মেশিন বরাদ্দ দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। যার অর্থায়ন করেছে দি গ্লোবাল ফান্ড নামে একটি আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে দি গ্লোবাল ফান্ড বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস নিয়ে কাজ শুরু করে। তারা আধুনিক ল্যাব স্থাপনে মেশিন প্রদানে ফান্ডিংয়ের প্রস্তাবনা করে। করোনার সংক্রমণের এই কঠিন মুহূর্তে সুনামগঞ্জবাসীর জন্য এটি কিছুটা হলেও সুখবর।
ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে সুনামগঞ্জবাসীর করোনাভাইরাস শনাক্ত করার জন্য অত্যাধুনিক পিসিআর মেশিনটি বরাদ্দ করেছেন। অত্যাধুনিক এ মেশিনে একসঙ্গে ৩৪০টি নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। দ্রুতই এটা স্থাপন করা হবে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সার্বিক সহযোগিতার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম মহোদয়ের প্রচেষ্টায় সুনামগঞ্জের ল্যাব স্থাপনের আন্তরিকভাবে কাজ করেছি এবং সফল হয়েছি।
ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন আরও বলেন, মেশিন বরাদ্দ পেয়েছি। এখন ল্যাব স্থাপন করা চ্যালেঞ্জ। কেননা করোনা ভাইরাসের মতো শক্তিশালী ভাইরাস সাধারণ ল্যাবরোটরিতে পরীক্ষা করা যাবে না। সেফটি ল্যাভেল নিশ্চিত করে বিশেষজ্ঞ জনবল নিয়োগ করতে হবে। এটি কঠিন বিষয়। আশা করছি আগস্টের প্রথম দিকে ল্যাব স্থাপনের কাজ শুরু করা যাবে।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানান, পিসিআর মেশিনটি সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। এতে নমুনাগুলো দ্রুত পরীক্ষা হবে। প্রস্তাবিত স্থানে ল্যাব স্থাপন করা হবে। তবে হাসপাতালের লোকবল সংকট ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে দ্রুত সময়ে ল্যাব চালুর বিষয়টি একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
ডা. আনিসুর রহমান আরও জানান, সুনামগঞ্জে করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিসিআর ল্যাবের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। সিলেট বিভাগের সকল জেলার নমুনা সিলেটের দুটি ল্যাব থেকে পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এ কারণে ল্যাব দু’টিতে অনেক নমুনা জমে। জমাকৃত নমুনার কিছু ঢাকায় পাঠানো হয়। ফলে পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে সময় লাগে। একারণে দ্রুত নমুনা পরীক্ষায় সুনামগঞ্জে একটি পিসিআর মেশিন স্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে ল্যাব স্থাপনের বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সবেমাত্র বরাদ্দ হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শামস উদ্দিন বলেন, ল্যাব চালু করতে স্পেশাল রুম প্রস্তুত করতে হবে। দক্ষ লোকবল নিয়োগ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ল্যাব স্থাপন ও পরীক্ষা কার্যক্রম চালু হওয়াতে সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন, পিসিআর ল্যাব স্থাপন হলে করোনার নমুনা পরীক্ষায় গতিশীলতা আসার পাশাপাশি নমুনা পরীক্ষার হার বৃদ্ধি পাবে এবং ভোগান্তিও কমে আসবে।