:: পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ ::
অ্যাডভোকেট কানিজ রেহনুমা ভাষা। রব্বানী ভাই-শাহানা আপার তিন সন্তানের মধ্যে বড়। করোনার থাবায় অল্প বয়সে গত ভোর রাতে সিলেটে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না…রাজউন)। ভাষার সাথে সবার ভাল সম্পর্ক ছিল। খুব মায়া করে মামা বলে ডাক দিত। প্রশাসন ক্যাডারের স্বামীকে নিয়ে তার দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল। আনন্দের ছিল। ঢাকায় থাকতে কতদিন তার বাসায় খাবারের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। যাওয়া হয়নি। আর হবেও না। করোনা আক্রান্ত হবার আগে সে সন্তানসম্ভবা ছিল। হয়তো অনাগত সন্তানকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। করোনায় সব শেষ।
রাজনীতি,সামাজিক সংগঠন সর্বত্র সরব পদচারণা ছিল তার। ছিল উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। সুন্দর আগামীর জন্য মেধা, পরিশ্রম, যোগাযোগ ছিল। ভাষা সফল হতো। বেঁচে থাকলে ভাল কিছু করত। দৃঢ়ভাবেই আমি বিশ্বাস করি।
ফেসবুকে সক্রিয় থাকত। কয়েকদিন থেকে হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নীরব ছিল। তারপর শুনি সে করোনা আক্রান্ত। শাহানা আপার সাথে কথা বলি। আপা শুধু কান্না করেন। কথা বলতে পারেন না। লাকি আপা ফোনে বললেন- ভাষার অবস্থা বেশি ভাল না। স্মরণ শুধু বলে দোয়া করবেন মামা।
ভাষা লড়াকু ছিল। তেজি ছিল। আমি সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় সে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হয়। শাহানা আপাকে নিয়ে আমার রুমে আসে। ছবি উঠে। কত আনন্দ তার। পরে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হয়। আমার বিশ্বাস ছিল জীবন মৃত্যুর কঠোর অবস্থা থেকে সে জীবনে ফিরে আসবে। কারণ সে জীবনকে ভালবাসত। সর্বশেষ ফেসবুকে সে উজ্জ্বল মেহেদীর জন্মদিনে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে উইশ করে। তারপর ফেসবুকে নীরব ছিল। আমার ধারণা অসুস্থ শরীর নিয়েই সে স্ট্যাটাসটি দিয়েছিল প্রিয় উজ্জ্বল মেহেদীকে নিয়ে।
ছোট্ট জীবন নিয়ে এসেছিল ভাষা। আমরা কেউ জানতাম না। তারাশঙ্করের ‘কবি’ উপন্যাসে কবি নিতাইচরণ খেদ করে বলেছিলেন, ‘জীবন এত ছোট্ট কেনে?’
আমার বারবার মনে হচ্ছে ভাষার জীবন এত ছোট কেন? এত স্বল্প আয়ু নিয়ে এসেছিল আমরা কেউ জানতে পারিনি। এতো দ্রুত তার জীবনের সব শেষ হয়ে যাবে কারো ভাবনায় ছিলনা। আমাদের ছোট শহরের সামাজিক বন্ধনে সবার আদরের ভাষা বড় অকালে চলে গেল। কিছু মৃত্যু খুব ভারী। ভাষার মৃত্যুও তাই।
অকাল প্রয়াত স্নেহের ভাষাকে আল্লাহ জান্নাত দান করুন। তাঁর পরিবারকে এই কঠিন শোক সহ্য করার শক্তি দান করুন। ভাষার মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত।