গত সোমবার (১২ এপ্রিল ২০২১) স্থানীয় এক কৃষক সহিবুর রহমানের দেখার হাওরের এক কেদার জমির পাকা ধান কেটে দিয়েছেন জেলা যুবলীগের শতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনাটি ঘটেছে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপলের নেতৃত্বে। গতকালের (১৩ এপ্রিল ২০২১) দৈনিক সুনামকণ্ঠে একটি সংবাদপ্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘কৃষকের ধান কেটে দিল যুব লীগ’। যুবলীগ অবশ্যই এই কল্যাণমূলক কাজের জন্যে সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য, আমরা যুবলীগের দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত কৃষকবান্ধব নেতাকর্মীদেরকে অভিনন্দন জানাই।
এই মুহূর্তে করোনা-সংক্রমণের আতিশয্যে বিপর্যস্ত দেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, দিনে দিনে আক্রমণের মাত্রা ও প্রাণহানির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই আদৎকালের বিপন্নতার ভেতরেই বোরো ফসল কাটার মৌসুম ক্রমে আসন্ন হয়ে উঠছে। আগামী সপ্তাহখানেকের মধ্যে ফসলকাটার পূর্ণব্যস্ততা শুরু হবে ভাটি অঞ্চলের হাওরের গ্রামে-গ্রামান্তরে, এবং এরপর শুরু হবে ধান ক্রয়বিক্রয়ের মওকায় ফড়িয়াবাণিজ্যের মচ্ছব। প্রতি বছরই সরকার নির্ধারিত মূল্যে কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং শেষ পর্যন্ত সেটা রক্ষা করা সম্ভব হয় না। একদিকে কৃষকরা লোকসান গুনেন ও অন্যদিকে ফড়িয়াব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কৌশলে ঠিকই তাঁদের ব্যবসাকে লাভজনক পর্যায়ে উপনীত করতে সক্ষম হন।
এবার যুবলীগ কৃষকের ধান কেটে দিয়েছেন। কয়েকদিন পরে এই ধান কৃষক সরকার নির্ধারিত মূল্যের কমে লোকসান গুনে সরকারের কাছে নয় মধ্যসত্তভোগী ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেবেন এবং এই মধ্যসত্তভোগীরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে সরকারের কাছে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করবেন, প্রকারান্তরে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি সরকারের ধান ক্রয়ের নীতি মাঠে মারা যাবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিদগ্ধ মহলের প্রশ্ন, যে ধান কৃষক কাটে নি, যুবলীগের নেতাকর্মীরা কেটে দিয়েছেন, কৃষকের মঙ্গল হবে বলে, সে ধান কৃষক এইভাবে কম দামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হবেন কেন? কৃষককে যদি এইভাবে কম দামে মধ্যসত্তভোগীদের কাছে ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হতে হয় তাহলে যুবলীগের এই ধান কেটে দেওয়ার ফায়দা রইল কই? এর কি কোন তাৎপর্য অবশিষ্ট থাকে, না নেতাকর্মীদের এই কৃষকবান্ধব কর্মকাণ্ড শেষ পর্যন্ত কোনও সার্থকতায় পর্যবশিত হয় ?
প্রকৃতপ্রস্তাবে এই যদি হয় অবস্থা, তা হলে এর প্রতিকার কী? আমাদের মনে হয়, এর প্রকৃত প্রতিকার এই হতে পারে যে, নির্ধারিত মূল্যে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সরকার কর্তৃক ধান ক্রয়ের বিষয়টিকে নিশ্চিত করতে হবে, এবং সেটা নিশ্চিত করতে পারেন যুবলীগের নেতাকর্মীরাই। কারণ যাঁরা কৃষকের ধান কেটে দিতে পারেন, তাঁরাই পারেন সে-ধান লোকসানে বিক্রি করা ঠেকাতে। অন্যথায় কৃষকের ধান কেটে দেওয়ার কৃষকবান্ধবতা থেকে উপজিত উপকারের উপস্বত্বটি কার্যত মধ্যসত্তভোগীর ঝুলিতে গিয়েই পড়বে।