:: হোসেন তওফিক চৌধুরী ::
তাহিরপুরে সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে সারাদেশেই তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানানো হচ্ছে। সাংবাদিকদের সাথে দেশের বিদগ্ধ মহল এবং সুধীজনরাও প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। ইতিমধ্যেই তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ, সিলেট, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন হয়েছে এবং হচ্ছে। জাতীয় দৈনিকসমূহে কড়া স¤পাদকীয় লেখা হয়েছে। সকল মহল থেকেই সাংবাদিক নির্যাতনকারীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রদানের দাবি জানানো হয়েছে।
পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীর তীরবর্তী ঘাগটিয়া গ্রামে স্থানীয় সাংবাদিক কামাল হোসেন রাফিকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। এতে তাঁর মুখ, মাথা, কপালসহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম হয়েছে। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। যাদুকাটা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু-পাথর সংগ্রহকারীরাই এই জঘন্য ও গর্হিত কাজ করেছেন। যাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলন করার খবর পেয়েই এই সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন এবং খবর সংগ্রহের একপর্যায়ে ফটো তুলতে গিয়েই মধ্যযুগীয় কায়দায় তিনি নির্যাতনের শিকার হন। উল্লেখ্য, গত ১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে যাদুকাটা নদীর তীরবর্তী ঘাগটিয়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। ইতোমধ্যে এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, বাকিরা পলাতক আছে।
যাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালু পাথর সংগ্রহ জনবসতির জন্য মারাত্মক হুমকি। এ জন্য নদী থেকে বালু পাথর সংগ্রহ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু বালু পাথর সিন্ডিকেটের সদস্যরা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বালু পাথর সংগ্রহ করছে। এতে জনবসতি ছাড়াও জীববৈচিত্র্য বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন। এদের দাপটে নদী তীরবর্তী মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত। ভয়ংকর সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়েই এরা এই অবৈধ এবং হীনকার্যে লিপ্ত। ফলে স্থানীয় লোকজন এদেরকে বাধা দিতে ভীত। গভীর রাতেও এরা তাদের এই জঘন্য কার্য অব্যাহত রাখছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব নিয়ে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে। কোনো অবস্থায় এদেরকে ছাড় দেওয়া যাবে না। এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতেই হবে। নইলে নদী তীরবর্তী মানুষজনকে ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র সরে পড়তে হবে। প্রয়োজনবোধে একটি বিশেষ টিম গঠন করে এদের শায়েস্তা করতে হবে। সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখা একান্ত প্রয়োজন। এরা স্থানীয়ভাবে যতই শক্তিশালী হোক, সরকারের চেয়ে তো এরা শক্তিশালী নয়। এদেরকে শায়েস্তা করা কঠিন ব্যাপার নয়। অবিলম্বে এদের শায়েস্তা করা ও আইন মানতে বাধ্য করা সর্বাধিক প্রয়োজন এবং নদী তীরবর্তী মানুষের প্রাণের দাবি। এতে গড়িমসি বা উদাসীনতা দেখানো হলে ভয়াবহ ও মারাত্মক পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে। এ ব্যাপারে সক্রিয় কার্যকারী ব্যবস্থা গৃহিত হবে বলে সকল মহলের প্রত্যাশা।
[হোসেন তওফিক চৌধুরী : সিনিয়র আইনজীবী ও কলামিস্ট]