:: ম ফ র ফোরকান ::
সুনামগঞ্জ পৌরসভায় দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত মেয়র নাদের বখতের উচিত সাবধানে পা ফেলা। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মুখ ফিরানো উচিত অতীতের দিকে। অবশ্যই যাচাই করে দেখার দাবি রাখে, তাঁদের পরিবার থেকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান-মেয়রদের সাথে কার কেমন স¤পর্ক ছিল। কে শত্রু ছিল, কে ছিল তাঁদের মিত্র, তা জানা না থাকলে বিভ্রান্ত হতে হবে নাদেরকে। প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কপালের লিখন হয়েও দাঁড়াতে পারে। লেবাস পরিবর্তনকারী লোকজনের অতীত কার্যকলাপ বাছ-বিচার করতে ব্যর্থ হলে সুনামগঞ্জের বর্তমান মেয়র নাদেরকে যে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হবে তার আলামত কিন্তু এখনই ¯পষ্ট হয়ে গেছে। শুরুতে সতর্ক না হলে বিপদ তাঁর ছায়াসঙ্গী হয়ে যেতে পারে। মনে রাখা প্রয়োজন, অতীতে কোন এক চেয়ারম্যানের যারা ‘গোলামী’ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে, তারা তাদের লক্ষ্য পূরণে সদা-সর্বদা থাকে খুবই তৎপর। যতই নিন্দার পাত্র হোক না কেন, যার খুদ খেয়ে এরা সমাজে একটা অবস্থান নিয়েছেন, তারা ঐ চেয়ারম্যান বাড়ির কুকুরের স্বার্থ রক্ষায়ও যে সর্বশক্তি প্রয়োগে কার্পণ্য করবে না তা সহজেই অনিমেয়। এ ব্যাপারে বিশদ ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। এদের পক্ষে নিজের বাবাকে অস্বীকার করা সম্ভব কিন্তু তাদের ‘ভাগ্যদেবতা’র ওপর থেকে মুখ ফেরানো কস্মিনকালেও অসম্ভব বলে আমার ধারণা।
ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন জমিদার-জোতদারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে সব সময়। ছাত্র ইউনিয়নের মতো একটি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকা সুনামগঞ্জের কিছু স্বার্থান্ধ ব্যক্তি স্থানীয় এক জমিদারের প্রপৌত্রের গুণ কীর্তনে দিবানিশি থাকেন মশগুল। অতীতের ফিটকারী আর ব্লিচিং পাউডারের ব্যবসার লাভ তাঁদের এমনই দিনের কানা বানিয়ে রেখেছে যে, ঐ ব্যক্তির সব মন্দগুলোও মহাপবিত্র মনে হয় তাদের কাছে। নানা জনের কাছ থেকে ঘন ঘন পায়ে ধরে ক্ষমা লাভকারী জনৈক ‘গণমাধ্যমকর্মী’ এ বিষয়ে সবচেয়ে আলোচিত সুনামগঞ্জে। জগলুল প্রথম নির্বাচিত হওয়ার পর পৌরসভার উন্নয়নকাজের প্রথম টেন্ডারে মস্তবড় এক কেলেঙ্কারি ঘটিয়ে বসেন ঐ সাংবাদিক। পরে এ নিয়ে মামলা হলে ফাঁটা বাঁশে আটকে পড়া সাংবাদিক ক্ষমা ভিক্ষা চেয়ে পার পান। আফতাবনগর ইউনিয়নের জনৈক চেয়ারম্যানের পায়ে লুটিয়ে পড়ার কাহিনীও খুব বেশি দিন আগের নয়। এ ঘটনাও ঘটেছিল ভুয়া সংবাদ পরিবেশনের দায়ে। হাওরের মাটি কলমেও নাকি কাটতে পারদর্শী তথাকথিত গণমাধ্যমকর্মী। যাই হোক, এমন ঘটনাগুলোর ফিরিস্তি বিস্তর। সম্প্রতি মেয়রের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার সংবাদেও দেখা গেল একটা চমক। সংবাদটির তথ্যদাতা হিসেবে যে কোর্ট ইন্সপেক্টরের নাম ছাপা হয়, সে নামের কোন কোর্ট ইন্সপেক্টরই নেই আদালতে। অথচ কিছু প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াই সোর্স হিসেবেই একই নাম ব্যবহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সহজেই ধরা পড়ে, সংবাদটি তৈরি হয়েছে কেবল এক ব্যক্তির কলমে। তারপর বিলি হয়েছে নানাজনের কাছে। এ অতিউৎসাহী ব্যক্তিটি কে? তিনি নিশ্চয়ই মেয়র কিংবা তাঁর পরিবারের শুভাকাঙ্ক্ষী নন। ‘সংবাদ ব্যবসা’ জনগণ কামনা করে না কখনও। সব সময় আমরা চাই সত্যনিষ্ঠ, বস্তুনিষ্ঠ এবং ন্যায়নিষ্ঠ সংবাদ। সংবাদ হত্যা কখনই নয়, কোন অবস্থায়ই নয়।
সংবাদ নিয়ে সুনামগঞ্জে বর্তমানে কোন কোন ব্যক্তি যে কাণ্ডকারখানা করে চলেছে তা ভাবতেও পারিনি। কদমবুচি মার্কা সাংবাদিকরা সাংবাদিকতা পেশাকে যে স্তরে নামিয়ে এনেছে তা নিঃসন্দেহে লজ্জাষ্কর। কেউ কেউ ‘ভাগ্যদেবতার’ গুণকীর্তনে ব্যস্ত। ঐ দেবতার দৌলতে কেউ নিজের ভাগ্য বদল করতে সমর্থ হয়েছেন, কেউ নিজে পৌর বিদ্যালয়ে চাকুরির সুযোগ পেয়েছেন, একই সঙ্গে জুটিয়েন বোনের চাকুরি, কেউ আবার পৌরসভার টাকায় নিজের বাড়ির রাস্তাটিও পাকা করে নিয়েছেন। এমন ঋণ কি সহজে ভুলা সম্ভব? যারা এমন ঋণের বন্ধনে আবদ্ধ, তাঁরা প্রয়োজনে হাজারবার ‘বাবা বাবা’ বলে মুখে ফেনা তুলতে কসুর করতে পারে না।
এজন্যই মেয়র নাদের বখতের সাবধানতা অবলম্বন প্রয়োজন। যে কোন সময় যে কেউ সর্প হয়ে দংশন করেতে পারে। নিঃসংকোচে ঐ লোকটিই আবার ওঝা হয়ে ঝাড়তে বসে পড়তে পারে পায়ের পাশে। এতএব সাবধান, মেয়র নাদের বখত।