1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০১:৫৩ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

পুঁজিবাদকে বিদায় দিতে হবে

  • আপডেট সময় শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

গণমাধ্যমান্তরে প্রকাশ মা-বাবার ভালোবাসায় ভাগ বসানোর অপরাধে ছোট বোনকে হত্যা করেছে এক কিশোর। সে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ১৪। হত্যার কারণ হিসেবে শিরোনামে বাবা-মায়ের ভালোবাসা কম পড়ার বিষয়টি প্রাধান্য পেলেও ভেতরের সংবাদবিবরণীতে ভালোবাসার সঙ্গে সম্পত্তির ভাগ পাওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। লেখা হয়েছে, ‘ছোট বোন মা-বাবর বেশি আদর পাচ্ছে। বড় হয়ে সে সম্পত্তিতে ভাগ বসাবে। এমন উদ্ভট চিন্তা থেকে ছোট বোনকে হত্যা করেছে কিশোর বড় ভাই। রাজধানীর বনানীর কড়াইল বস্তিতে ঘটেছে এমন ঘটনা। ঘাতক আল-আমিন সজীব (১৪) র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছে।’
কিশোর এই সমাজেরই মানুষ। এই পুঁজিবাদী সমাজ মানুষকে চরম স্বার্থবাদী ও সম্পত্তির প্রতি লোভী করে তুলে, তাই এই কিশোরের চিন্তা এই সমাজেরই বাস্তবতা থেকে উদ্ভূত এবং সেটা কোনওভাবেই উদ্ভট হতে পারে না, বরং খুবই বাস্তব।
দেশের বর্তমান বাস্তবতাটা কী? একটু চিন্তা করলেই তার হদিস মিলবে। আমলা, জনপ্রতিনিধিসহ রাজনীতিক নেতা ও রাজনীতিক কর্মী, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় সকলেই বাস্তবে যাঁরা সকলে মিলে রাষ্ট্রের পরিচালকÑ পুঁজিবাদী পদ্ধতির স্বীকৃত ব্যক্তিমালিকানার নিয়মের আওতায় ব্যক্তিগত সম্পত্তি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় অনেকে ব্যস্ত হয়ে নৈতিক অধঃপাতের চরমে পৌঁছেছেন। তার অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যাবে গণমাধ্যমের বিভিন্ন সংবাদ উদ্ধৃত করে। এই দেশের মানুষ কোনও দিন ভুলতে পারবে না যে, পুঁজিবাদী স্বার্থসংরক্ষণই ছিল বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার মূল কারণ। এই দেশের একজন ওসি, ডিসি, ডিজি, এমডি, পরিচালক, কর্মকর্তা কিংবা সংসদ সদস্য-মন্ত্রী, স্থানীয় প্রভাবশালী সমাজপতি কোন্ ছার একজন সাধারণ পিয়ন পর্যন্ত কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়, অর্থাৎ অবাধে অবৈধ পথে বিপুল সম্পদ উপার্জন করে। সব জানার পরেও কেউ তাকে প্রতিহত করে না, বরং সে-অবৈধ উপার্জনে শরিক হয়ে নিজের আখের গোছাতে নিমগ্ন হয়। এই সবের রহস্য একটাই এখানে সমাজটার ধরণ পুঁজিতান্ত্রিক। এই দেশে অন্যায় পদ্ধতিতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট, ঘুষ, প্রতারণা, মিথ্যাচার, জুয়াজুচ্চুরি, চুরিচামারি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, চোরাচালান, আদম ব্যবসা, পতিতালয় পরিচালনা, খাদ্য ও ঔষধাদিতে ভেজাল দেওয়া, গুম, অপহরণ, জিম্মি করে টাকা আদায়, মজুতদারি, সুদের কারবার, জবরদখল, মনোনয়ন বাণিজ্য, অস্ত্রবাজি, সন্ত্রাস ইত্যাদি হেন দুষ্কর্ম নেই যা করা হচ্ছে না এবং এইসব কর্মকাণ্ড চূড়ান্ত মুহূর্তে কোনও না কোনওভাবে রক্তপাতের পর্যায়ে পর্যন্ত পর্যবশিত হয়। এরপর সহজেই হৃদবোধ হয় যে, প্রকারান্তরে ‘পুঁজির গোটা ইতিহাসটাই হল হত্যা ও লুট, রক্ত ও পাঁকের ইতিহাস।’
পুঁজি সম্পর্কে ভøাদিমির ইলিচ লেনিনের সেই বিখ্যাত উক্তিটি লক্ষবারের মতো আবারও প্রমাণিত হয়। এই পুঁজির রাজত্বে মানুষ তো খুনি হবেই। ভাই সম্পত্তির অধিকার পাওয়ার লোভে বোনকে হত্যা করবেই। এমনকি পুত্র হত্যা করতে পারে পিতাকে। গত ১৩ সেপ্টেম্বরে দৈনিক কালের কণ্ঠে ছাপা হয়েছে, একটি সংবাদ, সেখানে পুত্র পিতাকে অবশ্য খুন করে নি, তবে সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। সেটাও একরকম মৃত্যুর সামিল। সংবাদটির শিরোনাম ছিল, ‘জমি লিখে নিয়ে বৃদ্ধ মা-বাবাকে ঘর ছাড়া করলেন ছেলেরা’। লেখা হয়েছে, ‘সম্পত্তি লিখে নিয়ে ৭০ বছরের অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা জামেরুল ও মা রাশেদাকে (৬৫) বাড়ি থেকে বের করে দিলেন তিন ছেলে। কোনো উপায় না পেয়ে বৃদ্ধ আর বৃদ্ধা আশ্রয় নেন একটি বন্ধ স্কুলের কক্ষে। পরে পুলিশ জানতে পেরে ওই বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। ঘটনাটি ঘটেছে গুরুদাসপুর পৌর এলাকার উত্তর নারীবাড়ি মহল্লায়।’ আরও লেখা হয়েছে, ‘বৃদ্ধা স্ত্রী রাশেদা বেগম জানান, স্বামী প্যারালাইসিসের রোগী। তার চিকিৎসার জন্য জমিজামা শেষ। মাত্র তিন শতক জায়গা ছিল তাদের নামে, ভরণপোষণের আশ্বাস দিয়ে ওই সম্পত্তি লিখে নেন তাঁর তিন ছেলে জালাল (৪৫), আলাল (৪২) ও রসুল (৩৮)। কিছু দিন পর তাদের ভরণপোষণ বন্ধ করে দেয় ছেলেরা।’
তারপর বলাই যায় সমাজটা যতোটুকু পচেগলে নষ্ট হওয়ার তা হয়ে গেছে এবং আর কীছু করার নেই। কিন্তু এই ‘কীছু করার নেই’টুকুতে জোর আপত্তি আছে। কারণ করার আছে এবং করতে হবে। পৃথিবীতে বার বার মানুষ এই করার কাজটি ঠিকই করে এসেছে এবং করতে করতে আজ উন্নতর এ পর্যায়ে এসেছে। এই উন্নততর পর্যায়ের উৎকৃষ্ট উদাহরণ বাংলাদেশ, যদিও বাংলাদেশের চেয়েও বেশি উন্নত রাষ্ট্র-দেশ পৃথিবীতে আছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রভুত উন্নয়ন হয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এই উন্নয়নের উপকারভোগী হয়েছে অনেক লোক। যারা ধনী এবং এই ধনীদের বিপরীতে রয়ে গেছে কোটি কোটি উন্নয়নস্পর্শবঞ্চিত নির্ধন মানুষ। এই জন্যই সমাজের মানুষের মধ্যে শ্রেণিবৈষম্য বাড়ছে, ব্যক্তিতে ব্যক্তিকে ক্রমাগত ঘটছে ধনবৈষম্য এবং প্রকারান্তরে এইসব অত্যাচার, লুটপাট, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি অঘটন ঘচেই চলেছে অর্থাৎ অন্যায়, অনৈতিক ও অমানবিক যতোসব কর্মকাণ্ড। এইসব বন্ধ করার একমাত্র উপায় সম্পদের মালিকানায় সমাজের প্রত্যেকের জন্য সমান হিস্যা নিশ্চিত করা, এর কোনও বিকল্প নেই, সেটা ব্যক্তিমালিকানা রহিত করেই হোক আর পুঁজিবাদকে বদলে দিয়েই করা হোক। অন্যায় অত্যাচার থেকে এমনকি যুদ্ধ থেকে রেহাই পেতে হলে করতেই হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com