শহরের একটি আবাসিক এলাকার ভেতর মাদকসেবী আর বখাটেদের অভয়াশ্রম হলে এর বিষবাষ্প ছড়িয়ে নষ্ট করে ফেলবে আশপাশের পরিবেশ। এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। সমাজের কোনো সুস্থ ও সচেতন মানুষ বিষয়টির সমর্থন করতে পারেন না। গুটিকয়েক বখাটের অপকর্মের প্রভাবে পুরো এলাকা আক্রান্ত হোক এটা অবশ্যই কারো কাম্য নয়।
“জেলা শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণ : বিকেলে বখাটে, রাতে মাদকসেবীদের আড্ডা” শিরোনামে গতকাল দৈনিক সুনামকণ্ঠে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদে বলা হয়, সকালে শিশুদের পাঠ। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নবোনা। দেশীয় সংস্কৃতির চর্চা। সুন্দর আগামীর যতো গল্প। আর বিকেলে বখাটে এবং রাতের অন্ধকারে মাদকসেবীদের আনাগোনা। এ চিত্রটি জেলা শহরের জামতলা এলাকার বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ভবন প্রাঙ্গণের।
দিনের শুরুতে ছোট্ট সোনামনিদের ছোটাছুটি, আনন্দ আড্ডা, গান, নৃত্যে ভবন প্রাঙ্গণ মুখরিত থাকলেও রাতে এটি হয়ে ওঠে মাদকসেবনের এক ‘অন্যতম স্পট’। আর বিকেলে বিভিন্ন এলাকার বখাটেরা জড়ো হয়ে আড্ডাবাজিতে মেতে ওঠে সেখানে। এদের বেপরোয়া চলাফেরাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষজন। এমনটিই অভিযোগ করেছেন জামতলা এলাকার বাসিন্দারা। সম্প্রতি জামতলা এলাকার এই প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে বখাটে ও উশৃঙ্খল অজ্ঞাতনামা তরুণদের আসা যাওয়ার বিষয়টি সদর মডেল থানা পুলিশকে অবগত করা হয়েছে।
“শিশু একাডেমী ভবনে অসামাজিক কার্যকলাপ নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে” জানিয়ে এলাকাবাসী এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে সংবাদে বলা হয়- প্রতি কর্মদিবসে নিয়মিত কার্যক্রমের পর প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকে। এরপর থেকেই শুরু হয় বখাটেদের আনাগোনা, আড্ডা। এরা দিনে ধূমপান ও জুয়া খেলায় মেতে থাকে। সন্ধ্যার পর ভবনটির বারান্দা ও ছাদে জমে ওঠে নানা ধরনের মাদকের আড্ডা। স্কুলছাত্রীদেরও স্কুলে যাওয়া-আসার পথে অশ্লীল ভাষায় উত্ত্যক্ত করে বখাটে মাদকাসক্তরা।
আমরা জানি যে, শিশু একাডেমিতে শিশুদের আগামী দিনের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সুস্থ সংস্কৃতির পাঠ দেওয়া হয়। এখান থেকে দীক্ষা নিয়ে শিশুরা দেশের সুনাগরিক হিসেবে বেড়ে ওঠবে। সংস্কৃতি চর্চার মধ্যদিয়ে বেড়ে ওঠা শিশুরা সমাজে আলো ছড়াবে। আমরা জানি, সুস্থ সংস্কৃতিই সমাজ বদলের হাতিয়ার। সুস্থধারার সংস্কৃতিই পারে অন্ধকার দূর করে একটি সুন্দর সমাজ নির্মাণের পথ দেখাতে। সমাজ বদলের হাতিয়ার সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্রস্থল বখাটে ও মাদকসেবীদের আড্ডখানায় পরিণত হবে এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। সংস্কৃতি চর্চার পীঠস্থান শিশু একাডেমিতে বখাটেদের আনাগোনা বন্ধ করে এর সুরক্ষায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে তৎপরতা ও নজরদারি বাড়াতে হবে। আমরা মনে করি, বখাটে আর মাদকসেবীদের প্রতিরোধে শুধু আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর পাশাপাশি সামাজিকভাবেও সকলকে উদ্যোগী হতে হবে। সকলের সম্মিলিত আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলেই বখাটে ও মাদকাসক্তমুক্ত হবে শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণ।