টরন্টোর যে চার্চের সৌজন্যে ডিনার খেয়েছিলাম, তাদেরই সৌজন্যে লাঞ্চ। তারিখ ১৯ শে ডিসেম্বর। স্থান চার্চের লাগোয়া তাদের নিজস্ব গেদারিং হল। সপ্তাহে একদিন এই হলে বয়স্করা মিলিত হন। চা-কফি স্ন্যাকস এবং দুপুরের খাবারের বা লাঞ্চের আয়োজন থাকে। দিনটি উইক এন্ড নয়। প্রতি বৃহস্পতিবার। কাজেই কর্মজীবীরা উপস্থিত থাকেন না। নিত্যনৈমিত্তিক আয়োজনের সঙ্গে ক্রিসমাস উপলক্ষে কিছুটা ব্যতিক্রম। সেদিন নিয়ম-কানুনে অন্যদিনের সঙ্গে বিশেষ তাফৎ নেই। প্রথমে প্রার্থনা। তার চা-কফি-ভেজিটেবল-স্ন্যাকস এবং ফলমূল খাওয়া শুরু হয়ে যায়। কারো না কারো জন্মদিন থাকে। স্পেশাল কেক কাটা হয়। তবে লাঞ্চের পরে। মোট সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত। যত খুশি স্ন্যাকস খাও। এক প্লেট শেষ হলে আরেক প্লেট। নানা ধরনের বিস্কিট বা কুকি। পিঠা জাতীয় জিনিস। কেক, চিজ, বাটার ইত্যাদি। অনেকেই বিভিন্ন খাবার নিয়ে আসেন। দুপুর সাড়ে বারোটায় লাঞ্চ শুরু হয়। মেন্যুতে সবজি, চিকেন, রাইস, বান রুটি বিভিন্ন ধরনের কারি; সব বুঝিনা। এগুলো সাধারণ দিনের নিয়ম। তবে ক্রিসমাস লাঞ্চ উপলক্ষে ডিনারের মতোই দু’ধরনের ডিস ছিল। যার যেটা পছন্দ। সেদিন পাঁচজনের বার্থ ডে থাকায় পাঁচটি কেক কাটা হয়। প্রার্থনা শেষে পিয়ানো বাজিয়ে ভক্তিমূলক সঙ্গীত। টেবিলে টেবিলে টেবিল টক আর খাওয়া। তবে টেবিলের আলোচনা উঁচুমানের। চেনা জানা থাকলে পরিবেশ অনেক ঘরোয়া মনে হবে। সেদিন বাইরে অনবরত তুষারপাত হচ্ছিল। কাঁচের জানালা দিয়ে দেখা যায়। রাশি রাশি তুলার মতো বরফ বৃষ্টি হচ্ছে। ভেতরে হিটিং সিস্টেমের কল্যাণে আরামদায়ক উষ্ণতা। মৃদু গুঞ্জন। একটি ছোট মেয়ে সবাইকে বিস্কিট উপহার দিল। লাঞ্চের পর দ্বিতীয় পর্ব আরো আকর্ষণীয়। হঠাৎ দরজা ঠেলে সান্তাক্লজের আগমন। লাল পোষাক, লাল টুপি, লাল ট্রাউজার, লাল আলখেল্লা পরনে। সাদা দাড়িগোঁফ, চেহারা লম্বা-চওড়া। আসলে সান্তাক্লজ ভেতরেই ছিলেন’ এখানকারই সদস্য। খাওয়া-দাওয়ার পর এক ফাঁকে বেরিয়ে পোষাক বদলে এখন সান্তাক্লজের বেশে পুনঃআগমন। ইতিমধ্যে সবাইকে ক্রিসমাস শুভেচ্ছা এবং কার্ড বিলিয়ে দেয়া হয়ে গেছে। এবারে সান্তাক্লজ প্রত্যেককে আর এক প্রস্থ শুভেচ্ছা কার্ড এবং সঙ্গে একটি করে চকোলেটের বক্স উপহার হিসেবে হাতে হাতে তুলে দেন। দু’জন মহিলা তাঁকে সাহায্য করেন। চকোলেট এখানে বড়রা বিশেষ করে বয়স্করা বেশি খায়। বাচ্চাদের জন্য অনেকটা নিষিদ্ধ। পেরেন্টস ও গার্ডিয়ানরা খেতে দিতে চান না। পোকা লেগে দাঁত নষ্ট। কাজেই চকোলেটে বারণ। বাজারে নানা ধরনের চকোলেট বার পাওয়া যায়। খাওয়ার শেষ নাই। চার্চের গেদারিং হলে বাদাম এবং বাদাম জাতীয় খাদ্যদ্রব্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ। আমার জানামতে বাদাম একটি উৎকৃষ্ট প্রোটিন ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার। এ নিয়ে দ্বিমত নেই। কাজেই উৎসুক হয়ে খোঁজ-খবরে জানতে পারি- বাদাম এলার্জি সূচক। বাদাম থেকে যে কোন সময় যে কারো মারাত্মক এলার্জি হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা সাবধান থাকতে পারেন। হ্যাপি ক্রিসমাস শুভেচ্ছা। পুনঃ- ডিনার সম্পর্কে ইতিপূর্বে লেখা হয়েছে।