টরন্টো শহরজুড়ে চলছে ক্রিসমাস সিজন। কানাডাজুড়ে নিশ্চয়। তবে টরন্টো থাকায় অভিজ্ঞতাটা এখানের আলোকে। ইতিপূর্বে কোনদিন এ ধরনের ডিনার পার্টিতে যোগদানের অভিজ্ঞতা আমার নেই। বাংলাদেশে এবং নিজ বাড়ি সুনামগঞ্জ শহরে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন যথাযথ মর্যাদা ও উৎসবের সঙ্গে পালিত হয়। ২৫ শে ডিসেম্বর বাংলাদেশে সরকারি ছুটির দিন। এমন দিনে ঢাকায় ও সুনামগঞ্জে উৎসব কেক কাটা, নাস্তা খাওয়া ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে দু-একবার যোগ দিলেও ডিনারে কখনো উপস্থিত থাকিনি। ২৫ শে ডিসেম্বর একাধিকবার পশ্চিম বাংলার কলকাতা শহরে এবং একবার ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে তামিলনাড়ুর ভেলোর শহরে ছিলাম। সেখানেও দেখেছি জাঁকজমকের সঙ্গে দিনটি পালিত হয়। দেশ কিংবা বিদেশ সর্বত্রই যে কোন উৎসব উপলক্ষে যথেষ্ট কেনাকাটা শপিং হয়ে থাকে। বাণিজ্যের ও অর্থনীতির চাকা ঘুরে।
টরন্টোর স্থানীয় একটি চার্চের সৌজন্যে ২০১৯-এ তাদের ডিনার পার্টিতে যোগদানের অভিজ্ঞতা হয়। কানাডাসহ ইউরোপ আমেরিকায় ক্রিসমাস সিজন শুরু হয়ে যায় মূলত নভেম্বর মাস থেকেই। চলতে থাকে জানুয়ারির মধ্যভাগ পর্যন্ত। টরন্টো শহরে তখন ভালো রকম শীত (সর্বোচ্চ মাইনাস ২০ ডিগ্রি) ও কমবেশি তুষারপাত থাকলেও লোকজনের উৎসাহের কমতি নেই। রাস্তাঘাটে লোক চলাচল তথা গাড়ি চলাচল যথেষ্ট বেড়ে যায়। তৈরি হয় যানজট। শপিং মলে যেমন বাড়ে বিক্রির পরিমাণ তেমনি নানা রকম পণ্যের উপর নানা রকম ডিসকাউন্টের পরিমাণও বেড়ে যায়। পার্টিসহ নানা অনুষ্ঠান ও প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ লেগেই থাকে। বাড়িঘর, দোকানপাট আলোকমালায় সজ্জিত হয়। সর্বত্র চলে আসে উৎসবের মেজাজ। সান্টাক্লজের প্রতিকৃতি বানানো হয়।
যাই হোক সংশ্লিষ্ট চার্চের সৌজন্যে ৭ই ডিসেম্বর তারিখে তাদের ডিনার পার্টি অনুষ্ঠিত হয় একটি হল ভাড়া করে। পার্টি হল। আমাদের কম্যুনিটি সেন্টারের মতো। সময়, খাওয়া, মেন্যু, অতিথি সব চলে নিয়ম-কানুন মেনে। আমাকে নাতি সই একজন উনার গাড়িতে করে নিয়ে যান। এখানে লিফট দেয়া একটা সৌজন্যের মধ্যে পড়ে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যেও প্রথাটি প্রচলিত। সন্ধ্যা ছ’টায় শুরু হবে ক্রিসমাস ডিনার পার্টি। দশ মিনিট আগে পৌঁছে যাই। দোতলায় হলঘর, লিস্ট দেখে আমাদের নির্দিষ্ট টেবিলে বসানো হল। অনেকগুলো গোলটেবিল, নাম আলাদা। আমাদের টেবিলের নাম ‘স্টার’। দেড়শো থেকে দুশোর মতো অতিথি। পিয়ানোতে বাজনা চলছে। ঠিক ৬টার সময় পরিবেশনা শুরু হলো। অনেক ভলান্টিয়ার ছেলে-মেয়ে। দু’ধরনের ডিশ্। একটা টার্কিশ। অন্যটা স্থানীয় goat কারি বা আমাদের খাসির মাংস ইত্যাদি।
আমরা দু’জনে দু’ধরনের ডিশ নেই। উদ্দেশ্য দুটোই চেখে নেয়া। প্রথমে অবশ্য সবুজ কাঁচা সালাদ ও স্যুপ খেয়ে নেই। টার্কিশ ডিশে রাইস নেই। বদলে আলু। তবে মসৃণভাবে পেস্ট করা। চমৎকার স্বাদ। টার্কিশ ডিসে মাংস বেশ শক্ত মনে হল আমার কাছে। সম্ভবতঃ চিকেন। অন্য ডিশে goat-এর মাংসের সঙ্গে সামান্য রাইস বা ভাত। একটু ঝাল ঝাল। চমৎকার। আমাদের মতোই। এছাড়া বান রুটিও আছে। লোকজন মাঝে মধ্যে ভাত খেলেও পরিমাণ কম। শেষ পর্বে ডেজার্ট। টেবিলে সাজানো নানা ধরনের স্ন্যাকস। তবে সবই মিষ্টি জাতীয়। ডায়াবেটিসে খেতে মানা। তাহলেও খেয়েছি। শেষে কফি ও চা। অবশেষে সবার জন্য নানা খেলা ও পুরস্কার। রাত ৯টার মধ্যে সমাপ্তি ও একইভাবে বাসায় ফেরা। আরেকদিন লাঞ্চের কথা এবং অন্যান্য উৎসবের কথা লিখবো।