আমাদের দেশে কোচিং বাণিজ্য বেশ রমরমাভাবেই চলছে। একশ্রেণির শিক্ষক দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য। শিক্ষাকে তারা অনেকটা পণ্যে পরিণত করেছেন। ক্লাসে পড়ানোর চেয়ে কোচিংয়ে তাদের আগ্রহ বেশি। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রদানের চেয়ে কোচিংয়ের মাধ্যমে আয়-রোজগারের দিকেই তারা বেশি মনোযোগী। কোচিং না করলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী কোচিংয়ে আগ্রহী না হলেও বাধ্য হয়ে তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকের কাছে কোচিং করতে হয়। ক্লাসে শিক্ষা দেয়ার পরিবর্তে কোচিংয়ের মাধ্যমে একশ্রেণির শিক্ষকের অতিরিক্ত আয়ের এই প্রবণতা নিয়ে ইতোমধ্যে দেশের গণমাধ্যমগুলোতেও লেখালেখি হয়েছে। এতে তেমন কোনো কাজ হয়নি। ওই শ্রেণির শিক্ষকদের নৈতিকতাবোধ জাগ্রত হয়নি।
গতকালে দৈনিক সুনামকণ্ঠর একটি সংবাদশিরোনাম ছিল “মন্ত্রীর হাতে আইনের খসড়া : কোচিংয়ে জড়ালে চাকরিচ্যুত”। সংবাদবিবরণী থেকে জানা যায়, “কোচিং বাণিজ্য এবং নোটবই বন্ধে শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতির মতো কঠোর শাস্তির বিধান যুক্ত করে শিক্ষা আইন চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দীর্ঘ দিনেও চূড়ান্ত না হওয়ায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নিজেই শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্তকরণে হাত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। নোট ও গাইড বইয়ের বিষয়ে ওই খসড়ায় বলা হয়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড থেকে পান্ডুলিপির অনুমোদন নিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি বা প্রকাশক কেবলমাত্র সহায়ক শিক্ষা উপকরণ বা সহায়ক পুস্তক বা ডিজিটাল শিখন-শেখানো সামগ্রী প্রকাশ করতে পারবেন। কোন ধরনের নোটবই বা গাইডবই প্রকাশ করলে অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদন্ড বা ৬ মাসের কারাদন্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। এছাড়া এনসিটিবির অনুমোদনহীন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই অনুসরণ করলে কিংবা কোচিং বাণিজ্য জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে এমপিও (বেতন ভাতাদির সরকারি অংশ) স্থগিত, কর্তন বা বাতিল করা হতে পারে।”
বাজারে অনেক সহায়ক বই আছে, যেগুলোর প্রয়োজন আছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে। তবে এ ¯্রােতে মিশে গেছে অনেক নি¤œমানের সহায়ক বই, যেগুলো আসলেই ক্ষতি করছে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশে। আমাদের দেশের শিক্ষকরা ক্লাসের চেয়ে কোচিং সেন্টারের দিকে বেশি মনোযোগী হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় পাশ করার আশায় স্কুলে না গিয়ে শিক্ষকদের নির্দেশিত কিংবা পরিচালিত কোচিং সেন্টারে যাতায়াত করে। তাই ক্লাসে তেমন একটা শিক্ষালাভের সুযোগ পাচ্ছে না তারা। বিত্তশালী পরিবারের সন্তানরা একাধিক স্থানে কোচিং করতে পারলেও দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। প্রকৃতপ্রস্তাবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচাতে শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্তকরণে বিকল্প নেই।