হাওরাঞ্চলের প্রান্তিক চাষীরা দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখছেন। বর্তমান সরকারও কৃষির উন্নয়নে কৃষিতে ভর্তুকিসহ নানাভাবে বিশেষ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সরকারের সেই প্রচেষ্টার ফল ভেস্তে যেতে বসেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কতিপয় অসাধু লোকের কারণে। এরফলে কৃষকের অবস্থা ক্রমাগতভাবে শোচনীয় হচ্ছে।
“হাওরাঞ্চলের কৃষকের ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে” শিরোনামে গতকাল শনিবার দৈনিক সুনামকণ্ঠ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, হাওর-ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জের কৃষক প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন। এই অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে সংগ্রাম করছেন তাঁরা। কিন্তু রুদ্রপ্রকৃতি প্রতি বছরই তাদের স্বপ্ন ভেঙে দিচ্ছে। চাষবাস করতে গিয়ে কৃষক দিনদিন ফতুর হয়ে যাচ্ছেন। কৃষিতে ক্ষয়ক্ষতি বাড়লেও ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না তাঁরা।
যুগ যুগ ধরে নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক। এখন বঞ্চনার সঙ্গে যোগ হয়েছে ফসলহারানো। প্রতি বছরই পাহাড়ি ঢল, অতিবর্ষণ, অনাবৃষ্টি এবং শিলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে চললেও তারা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেই না। প্রকৃত কৃষকের কাছে পৌঁছেনা সরকারের নেওয়া নানা উপকরণ ও সহায়তা। বরং মধ্যস্বত্তভোগীরা ভোগ করছে কৃষকের সুবিধা।
প্রকাশিত সংবাদে কৃষকের কষ্টে ফলানো ফসলের ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দেয়া হয়েছে। গত এপ্রিল মাসে জামালগঞ্জ উপজেলা ছাড়া অন্য দশ উপজেলার প্রায় তিন ভাগের দুইভাগ ফসল নষ্ট হয়েছে শিলাবৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে। স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি ও কৃষকদের বরাত দিয়ে সংবাদে আরও বলা হয়, চলতি বোরো মওসুমে সুনামগঞ্জে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছে কৃষকের এবং সম্প্রতি পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে জেলার আমন ও বীজতলাসহ সবজির প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। টাকার অংকে যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। তাছাড়া মৎস্যচাষীদেরও প্রায় ৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বলার অপেক্ষা রাখেনা- যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ক্ষেতে ফসল ফলিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছেন, তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে না। আমরা আশা করি, হাওরাঞ্চলের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার জোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে হাওরাঞ্চলের কৃষকের ক্ষয়ক্ষতি পূরণে এগিয়ে আসবে।