বাংলাদেশ যখনই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যায় ঠিক তখনই অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। একাত্তরের পরাজিত সেই অপশক্তি এবং তাদের দোসররা এবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রথমে আতঙ্ক বিরাজ করলেও, বর্তমান সময়ে মানুষ সোচ্চার হয়েছেন। প্রতিবাদ জানাচ্ছেন জঙ্গি হামলার, ধিক্কার দিচ্ছেন জঙ্গি এবং তাদের মদদদাতাদের। সুনামগঞ্জবাসীও এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং জানাচ্ছেন। শুরু হয়েছে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত আন্দোলন। ২৩টি পেশাজীবী সংগঠন নিয়ে গঠিত জঙ্গি ও সন্ত্রাস বিরোধী নাগরিক ঐক্য পরিষদের আহ্বানে বৃহস্পতিবার হাজার হাজার মানুষ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে গণমিছিলে অংশগ্রহণ করেছেন। প্রতিবাদ সভায় বক্তারা দৃঢ়ভাবে বলেছেন- ‘যেখানে জঙ্গিবাদ সেখানেই প্রতিরোধ’। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এরকম সম্মিলিত উদ্যোগ আমাদের আশ্বস্ত করে।
বর্তমানে দেশে গজিয়ে ওঠা তরুণ জঙ্গিদের এই সর্বনাশা ব্যাধির হাত থেকে মুক্ত করতে আরো দরকার পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমন্বিত প্রয়াস। জীবন ও জগৎ স¤পর্কে প্রাথমিক পাঠ কচি-কিশোররা পরিবারেই প্রথম পায়। পরিবার থেকেই ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, পাপ-পুণ্য ও বৃহৎ-মহৎ জাতীয় মূল্যবোধগুলোর বীজ বপন করা হয়। এরপর যুক্ত হয় বৃহৎ সমাজের শিক্ষা। রাষ্ট্র, রাজনীতি ও ন্যায়-অন্যায় বোঝার শিক্ষা দেয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার মাধ্যমে যেমন যুক্তি ও বুদ্ধির স্ফুরণ ঘটায়, তেমনি সব কিছুকে যুক্তি ও বুদ্ধির আলোকে গ্রহণ ও বর্জন করার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। এমন প্রকৃত শিক্ষাই আমাদের সন্তানদের দিতে হবে।
এ কথা স্পষ্টভাবেই বলা যায়, জঙ্গিবাদ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একেবারেই বিপরীত শক্তি। এর আসল উদ্দেশ্য দেশে একটি মধ্যযুগীয় তালেবানি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। যার ফলে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ দেশ থেকে বিতাড়িত হবে। আমরা ৩০ লাখ শহীদের রক্ত¯œাত বাংলাদেশে তা হতে দেবে না। আমরা বিশ্বাস করি, এ দেশ কখনোই জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হবে না। তাই যেখানে জঙ্গিবাদ, সেখানেই প্রতিরোধ গড়তে হবে।