মাতৃদুগ্ধ মানবশিশুর জন্য প্রকৃতি নির্দিষ্ট খাদ্যভান্ডার। মানবসন্তান জন্মগ্রহণের আগে মাতৃগর্ভে অবস্থানকালে মায়ের শরীর থেকে খাদ্যগ্রহণ করে বেঁচে থাকে। কিন্তু ভূমিষ্ট হওয়ার পর নবজাতকের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য হিসেবে গ্রহণীয় প্রথম সহজপ্রাপ্য উপকরণ দুধের উৎস প্রসূতির স্তন। মানবপ্রজাতির জন্য এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম, এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে অর্থাৎ নবজাতককে বিকল্পখাদ্য গ্রহণ করতে হলে সে স্বাভাবিকভাবে যথার্থ পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়ে প্রাকৃতিকভাবেই স্বাস্থ্যহানির বিপদে আক্রান্ত হয়। তাই বলা হয়ে থাকে যে, শিশুর জন্য শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ হচ্ছে মাতৃদুগ্ধ।
বর্তমান বাণিজ্যিক পৃথিবীতে মাতৃদুগ্ধের বিকল্প তৈরি করা হয়েছে, যা বাজারে কিনতে পওয়া যায়। মুনাফানির্ভর অর্থনীতির বাজারবাস্তবতায় বিমুগ্ধ কোনও কোনও চিকিৎসক আর্থিক লাভের আশায় সুকৌশলে মাতৃদুগ্ধের বিকল্পের চিকিৎসাব্যবস্থাপত্র প্রদান করে থাকেন। তাছাড়া অনেক মা স্বাস্থ্যহানির কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে সৌন্দর্যহানির আশঙ্কায় শিশুকে স্তনদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত করেন এটা আরও খারাপ এবং ভীষণ অমানবিক। দেশে হাটেবাজারে শিশুর বিকল্পখাদ্য দেদার বিক্রি হচ্ছে। এই সব বিকল্পখাদ্য পুষ্টিসম্পন্ন দাবি করা হলেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা এগুলোকে কৃত্রিম ও ক্ষতিকারক বলে অভিমত দিচ্ছেন।
মাতৃদুগ্ধ পানের বিকল্প ব্যবহাররোধে ১৯৮১ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা আন্তর্জাতিক মাতৃদুগ্ধ আইন প্রণয়ন করে। শিশুর যথাযথ পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার মাতৃদুগ্ধ বিকল্প আইন প্রণয়ন করেছে ২০১৩ সালে। কিন্তু আইনটি বিধিতে পরিণত না হওয়ায় দেশের সকল নবজাতক কিংবা শিশুরা আইনের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং মাতৃদুগ্ধের বিকল্পখাদ্য বিক্রির বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় অভিজ্ঞমহলের অভিমত এই যে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ ও সবল করে গড়ে তোলতে হলে মাতৃদুগ্ধ বিকল্প আইন যথাযথভাবে প্রয়োগের লক্ষ্যে আইনটিকে বিধিতে পরিণত করার কোনও বিকল্প নেই।