পানির দেশে পানির কোনও অভাব নেই কিন্তু পানীয় (পানযোগ্য পানি)-এর অভাব ঠিকই আছে। অর্থাৎ হাওরে পানির অভাব হবার তো কোনও কথা নয় এবং অভাব নেইও কিন্তু বিশুদ্ধ পানির অভাব ঠিকই আছে। আমাদের সরকার গৃহীত পরিকল্পনা অন্তত সেটাই বলে দিয়েছে। গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠ পরিবেশিত এক সংবাদপ্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, ‘হাওর এলাকায় বিশুদ্ধ পানির জন্য সরকার ৫০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে।’ সত্যিকার অর্থেই সুনামগঞ্জবাসীর জন্যে এর চেয়ে আপাতত ভালো কোনও সংবাদ হতে পারে না। তিনি আরও বলেছেন, ‘বাড়ি বাড়ি টিউবওয়েল বসিয়ে দেবো, লেট্রিন দেবো।’ কেবল এই নয়, তার ভাষণে আরও বেশ কীছু গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নের পরিকল্পনার প্রসঙ্গ উঠে এসছে। যেমন কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ, পুল-কালভার্ট নির্মাণ, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে দৃষ্টিনন্দন করা, গরিবদের জন্যে ঘর তৈরি, রেলপথকে ছাতক থেকে সুনামগঞ্জ হয়ে নেত্রকোণা পর্যন্ত সম্প্রসারণ ইত্যাদি অনেক প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন।
আমরা মনে করি, তাঁর ভাষণোক্ত এইসব পরিকল্পনা প্রতিশ্রুতির চোরাবালিতে এবার আর বরাবরের মতো হারিয়ে যাবে না। তার একটি কারণ হলো, বাংলাদেশকে ২০৪০ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত করতে হলে প্রস্তাবিত এইসব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না করে কোনও উপায় নেই। অর্থাৎ এই সব উন্নয়নকাজ বাকি রেখে সরকার ঘোষিত উন্নয়নের বাস্তবতাকে দৃশ্যমান করা যাবে না, উন্নয়নগুলো অনিবার্যভাবেই আগেভাগে সম্পন্ন করে রাখতে হবে। একটি উন্নত দেশে পানীয়ের অভাব থাকবে এটা কী করে হয়? আর যদি পানীয়ের অভাব থাকেই তবে সেটাকে আর যা-ই বলা হোক অন্তত উন্নত দেশ বলা যাবে না।
কিন্তু সমস্যা একটি থেকেই গেছে। সুনামগঞ্জ শহরে পানীয় পানি পাতাল থেকে বেশি করে উত্তোলনের কারণে ইতোমধ্যে শুকনো মৌসুমে বিশেষ করে চৈত্র মাসে পাতালজলের স্তর নিচে নেমে যায়। আসলে তখন ব্যাপারটা এই দাঁড়ায় যে, পানির লেয়ার টিউবয়েল বা সাবমার্সিবল টিউবওয়েলগুলোর নলের বিস্তারসীমার নিচে নেমে যায়, এমতাবস্থায় টিউবওয়েল বা সাবমার্সিবল টিউবওয়েবগুলো পানির লেয়ার পায় না বলে পানি তোলতে ব্যর্থ হয়। বাড়ি বাড়ি টিউবওয়েল বসিয়ে দিলে হাওরাঞ্চলে অচিরেই পাতালজলের স্তর নিচে নেমে গিয়ে একটি প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করবে এবং এর প্রতিক্রিয়া হবে ব্যাপক, যা- কোনও উন্নত দেশে কিছুতেই কাম্য নয়। বিশদ আলোচনায় না গিয়ে কেবল এইটুকু বলে রাখি যে, বাড়ি বাড়ি টিউবওয়েল বসিয়ে দেওয়ার আগে পাতালজলের স্তর নিচে নেমে যাবার সমস্যাটির কথা ভুলে গেলে চলবে না। বরং আগপাছ ভালো করে ভেবে তবে বিপুলসংখ্যক টিউবওয়েল বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক বা ভাবা হোক কোনও বিকল্প পদ্ধতির কথা। আমরা বলি কি, বাড়ি বাড়ি টিউবওয়েল বসাবার আগে ভাবতে হবে।