গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল, ‘স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া স্টেশন হচ্ছে ২০০ উপজেলায়’। ভাবা যায় না। উন্নয়নের যাত্রাপথে শত বাধা ডিঙিয়ে বাংলাদেশ এমন একটি ঘোষণা দিচ্ছে। অথচ সর্বসাধারণের জানা আছে যে, ১৯৭৫-য়ের স্বাধীনতাবিরোধীদের চক্রান্তে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশে যে-রাজনীতিক পটপরিবর্তন হয়, সেটি ছিল প্রকৃতপ্রস্তাবে বাংলাদেশকে ফের পাকিস্তান আমলের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া, অনুন্নয়নের অন্ধকারে নিমজ্জিত করে রাখার একটি রাজনীতিক ষড়যন্ত্র। সে-ষড়যন্ত্রে বিরোধীরা সফল হয়েছিল। দুই দশক যাবৎ বাংলাদেশের উন্নয়নের চাকাকে জোর করে পিছনের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল। অবস্থাটা এমন ছিল যে, পূর্ববাংলার আয় পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে ব্যয় করা এবং পূর্ববাংলাকে শোষণ করে ছিবড়ে বানানোর রাজনীতি ও অর্থনীতি কায়েম রাখা। আর সেই সঙ্গে পূর্ববাংলার কতিপয় দালালকে মোটা দাগের সুবিধে দিয়ে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসকদের বশংবদ বানিয়ে রাখা। ১৯৭১ পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশে ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তানি ঔপনিবেশিকতার সেই ভৃত্যরাই ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আসলে এই হত্যা ছিল বাংলাদেশকেই হত্যা করার সামিল। এই স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় আরোহণ করে বাংলাদেশের খোলসের ভেতর একটি পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল। তাই বাংলাদেশকে তারা উন্নয়নের নামে পাঁচ পাঁচ বার দুর্নীতিতে বিশ্বসেরা বানাতে কসুর করেনি।
এইভাবে ১৯৭৫ সালের পরবর্তী প্রায় দুই দশক এই দেশে উন্নতির ইতিবাক কোনও সূচনা পরিলক্ষিত হয়নি। অথচ শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বে এখন বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। যদিও কেউ কেউ বলছেন, ‘পরিমাণ বৃদ্ধির মানেই যে গুণের বৃদ্ধি এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।’ তবে এ কথা তো সত্যি যে, পরিমাণগত উন্নয়নকে অস্বীকার করার জো নেই কারও। অপরদিকে এ কথাও তো সত্যি যে, পরিমাণগত পরিবর্তন না হলে গুণগত পরিবর্তনও শুরু হয় না। বাংলাদেশের উন্নয়নে এই গুণগত উন্নয়নের সূচনা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের কীছু সংবাদ বাংলাদেশের উন্নয়নে গুণগত বৃদ্ধির সূচনাকে প্রদর্শন করছে। সরকারি কর্তাদের পরিবারসহ কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ, ২০০ উপজেলায় স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া স্টেশন স্থাপন, প্রাথমিকে নারী শিক্ষক প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ¯œাতক করা, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বৈশাখী ভাতা প্রদান, সাবেক মন্ত্রী ও সচিবদের বাসা ছাড়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট, প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য ই-পেনশন সেবা, বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক আরও শক্তিশালীকরণ ইত্যাদি কার্যক্রম সফলভাবে করা বা করার সংবাদ যখন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তখন বাংলাদেশের উন্নয়নের সামগ্রিক পরিসরে একটি গুণগত উন্নয়নের সূচনা যে হয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ থাকে না। অন্তরে আশা জাগে শান্তি ও সুখের অরুণোদয় আর বেশি দূরে নয়। ‘ক্রমে আলো আসিতেছে।’ অন্ধকার দূরিভূত হচ্ছে।