‘স্টপেজে দায়িত্বরতদের হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিলে এই হয়রানি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়’। গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠে সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর সড়কের বাস স্টপেজে দৌরাত্ম্যের বর্ণনা এভাবেই দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এতোটাই নৈরাজ্যিক হয়ে উঠেছে যে, ‘লেগুনা কিংবা সিএনজিতে উঠলে যাত্রীদেরকে নামিয়ে দিয়ে বাসে উঠতে বাধ্য করা’ এবং ‘প্রতিবাদ করলে যাত্রীসাধারণের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা’কে, বাসস্টপেজের লোকেরা নিজেদের নিয়ম বলে জানিয়ে দিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘এটা আমাদের নিয়ম। এই নিয়ম সকলকে মানতে হবে। …আমরা চাইলে যেকোনো সময় রাস্তা বন্ধ করতে পারি। সরকারও আমাদের কাছে জিম্মি।’ অর্থাৎ সরকার তাদেরকে কীছুই করতে পারবে না, সরকারের এমন ক্ষমতা নেই। সুতরাং তারা যাচ্ছেতাই করতেই থাকবেন, সড়কে যাত্রীসাধারণের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ চলতেই থাকবে, কোনও প্রতিকার করা যাবে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে জনসাধারণের প্রশ্ন হলো, ‘সরকার যদি না পারে তবে তারপর কে প্রতিকার করবে এবং কীভাবে প্রতিকার করবে?’ এমতাবস্থায় প্রশ্ন প্রশ্নাকারেই থেকে যাবে, তার কোনও উত্তর মিলবে না বলেই মনে হয়। অর্থাৎ সামগ্রিক অর্থে দেশে একটি নৈরাজ্যিক অবস্থা বিরাজ করছে, যদি কেউ এমনটি ভাবেন তবে কি খুব বেশি একটা কীছু ভুল ভাববেন বলে মনে হবে? আমরা জানি দেশের ভেতরে অপরিসীম শক্তির অধিকারী হয়ে বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনীতিক দল আবির্ভূত হয়েছে। তার রাজনীতিক প্রতিপক্ষকে নির্বাচনে পরাস্ত করে এই রাজনীতিক গোষ্ঠী প্রমাণ করেছে নিজের অপার শক্তিমত্তা। মাদক, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শূন্যসহনশীলতার ঘোষণা কার্যকর করা অব্যাহত আছে এবং এতে করে দেশবাসী যথেষ্ট আশ্বস্ত হয়েছেন। কিন্তু এখানে সড়কে সাধারণ মানুষের চলাফেরার স্বাধীনতার বিষয়ে যে-জনগণ তাদেরকে এই শক্তির অধিকারী করেছে তারা পথচলার মৌলিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, এই নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে কতিপয় স্বার্থান্বেষী লোক, তারা সাধারণ মানুষের চলাফেলার স্বাধীনতাকে কুক্ষিগত করে নিয়েছে এবং টাকার বিনিময়ে চলাফেলার সুবিধাকে বিক্রি করছে। স্বাধীন দেশে এটা কী করে হয়? রাষ্ট্র কি এই কতিপয় লোককে, অর্থাৎ বাস স্টপেজের ম্যানেজার ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের কাছে সড়কপথ নিলামে বিক্রি করে দিয়েছে? সাধারণ মানুষ জানতে চায়। এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে? এর দায় কি কোনও যুক্তিতেই এই ক্ষমতাসীন রাজনীতিক দল, সরকার, সরকারের প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর উপর বর্তায় না? তাঁরা কি এর দায় অস্বীকার করতে পারেন?
যে-কোনও ক্ষমতাসীন রাজনীতিক দল কতো কীছুই তো করতে পারে। কী কী করতে পারে তার পরিসংখ্যান হাজির করার কোনও অবকাশ এখানে নেই। কিন্তু ইচ্ছে করলেই যে, সড়কের উপর নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদেরকে প্রতিহত করতে পারে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু যখন সড়কে সাধারণ মানুষের চলাফেলার স্বাধীনতা হরণকারীদেরকে প্রতিহত করার ব্যাপারটি এই ‘কতো কীছুই করার’র বাইরে পড়ে যায় তখন আর কারও কীছু বলার বা করার আছে বলে মনে হয় না, অন্তত সঙ্গত যুক্তি বিবেচনা তাই বলছে। এমতাবস্থায় যাঁরা সরকারকেই তোয়াক্কা করেন না তাদের বিরুদ্ধে কীছু বলা বা করার সাহস কার থাকতে পারে। সরকারকে যারা এভাবে হুমকি দেবার ক্ষমতা রাখেন এবং সরকারকেই যারা ইতোমধ্যেই জিম্মি করে রেখেছেন বলে সদম্ভে ঘোষণা করেন, তাদের শক্তিমত্তাকে আমরা অবহেলা করার কে? কেন্দ্রীয়ভাবে সরকার এবং স্থানীয়ভাবে সরকারের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ প্রশাসন, যে- প্রশাসনিক অঙ্গকে আমরা জনসাধারণরা সরকার বলে মানি, অর্থাৎ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার যদি এইসব বাস স্টপেজের ম্যানেজার ও তাঁদের সাঙ্গপাঙ্গদেরকে কীছুই না বলেন, তো কী আর করার থাকে? এই প্রশ্নের জবাব বিশ্বসংসারে সকলেই জানে, বেউপায় লোকেরা রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াবে।