বন্যাপরবর্তী সময়ে জেলার সাধারণ মানুষের অবস্থা দুর্ভোগের চরমে উঠেছে। বন্যাপরবর্তী জেলার সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে দৈনিক সুনামকণ্ঠে গতকাল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। বিভিন্নসূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদক বলেছেন যে, সুনামগঞ্জে বন্যার জল নেমে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই সঙ্গে প্লাবিত স্থানসমূহের অধিবাসীদের যাপিত জীবনে রেখে গেছে উত্তরোত্তর বাড়তে থাকা এন্তার দুর্ভোগ-ভোগান্তি, নিরিখ করতে গেলে যার কোনও নির্দিষ্ট সীমা নির্ণয় সত্যি দুষ্কর। বন্যায় মানুষের বসতভিটা আক্রান্ত হয়েছে, কারও ঘর ধ্বসে গেছে কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটি বসবাসযোগ্য অবস্থায় আর নেই। বিশেষ করে নি¤œবিত্ত মানুষেরা মাথাগুঁজার ঠাঁই পুনরায় নির্মাণ বা মেরামত করবে, সেটা তো দিল্লি দুরস্ত, অর্থাভাবে নিদেনপক্ষে বেঁচে থাকার খাদ্যপণ্যই জোগাড় করতে পারছে না, অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। সুনামগঞ্জ শহরেই নবীনগর এলাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার এরকম ভোগান্তির শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই কীছুদিন আগে হাওরের বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে, তারপর মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো এই বসতভিটা বিধ্বংসী বন্যার ক্ষয়ক্ষতি। অসহায় লোকেরা বলছেন, ‘এখন আমরা বাঁচবো কেমনে বুজতেছি না।’ সারা জেলায় এইরূপ বন্যা কবলিত অসহায় মানুষের সংখ্যাটা কত আপাতত তা জানা না গেলেও সেটাকে কম বলে এড়িয়ে যাবার উপায় নেই। তার প্রমাণ, ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসন জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য ১ লাখ ৫৪ মেট্রিক টন চাল ও নগদ সাড়ে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের এইরূপ জনবান্ধব তৎপরতা অতীব প্রশংসনীয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বরাদ্দের সামগ্রী মেরে খাওয়ার পুরনো প্রবণতাকে প্রতিরোধ করার প্রচেষ্টাকেও বরাদ্দ প্রদানের পর চালু রাখতে হবে। অন্যথায় লাভের গুড় পিঁপড়ায় খেয়ে নেবে। সে জন্য ক্ষেত্র বিশেষে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসন পিছপা হবেন না বলে আশা রাখি। দুর্গত মানুষের বরাদ্দ লোপাট করার অধিকার কারও নেই।
অন্যদিকে বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের তোড়ে জেলার সড়ক যোগাযোগ বিস্তর স্থানে ব্যাপকাকারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সড়কের বেহাল দশা এমন যে, কোথাও কোথাও একবারেই ভেঙে গিয়ে যান চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া বন্যার পানি নেমে যাবার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে সারা জেলায়। এমতাবস্থায় সড়ক মেরামতসহ প্রয়োজনীয় খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রী দুর্গত এলাকায় পৌঁছে দেবার ব্যবস্থাকে জোরদার করা অতীব প্রয়োজন। আমরা আশা করি, প্রশাসনের পাশাপাশি জেলার সর্বস্তরের মানুষ সহায়তার প্রতিমূর্তি হয়ে দুর্গত মানুষজনের পাশে এসে দাঁড়াবেন। যেমন সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁদের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে বন্যা দুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। তারা শহরের অদূরে সোনাপুরের বেদে পল্লিতে দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ তৎপরতা চালিয়েছে। তাদেরকে সাধুবাদ।