জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘নেশন মাস্ট বি ইউনাইটেড অ্যাগেইনস্ট করাপশন। পাবলিক ওপিনিয়ন মবিলাইজ না করলে শুধু আইন দিয়ে করাপশন বন্ধ করা যাবে না।’
জাতির পিতার আন্তরিক ইচ্ছার কারণেই স্বাধীনতার পর থেকেই দুর্নীতি দমন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে বহুবিধ আইন, বিধি-বিধান প্রণয়ন করা হয়। গত এক দশকে আরো কিছু নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার উন্নয়নে বেশকিছু নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরিসহ এগুলোর ব্যবস্থাপনা ও পদ্ধতির উন্নয়ন সাধন এখন কার্যকর হয়ে উঠেছে। লক্ষণীয় ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রণীত ‘বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১’ শীর্ষক দলিলে দুর্নীতি দমনকে একটি আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। এই আন্দোলনে সবাইকে অংশীদার হতে উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া দুর্নীতি দমনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম যেসব আইন গত এক দশকে প্রণীত হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’, ‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯’, ‘সরকারি অর্থ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৯’, ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯’, ‘চার্টার্ড সেক্রেটারিজ আইন, ২০১০’, ‘জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন, ২০১১’, ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২’, ‘মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২’, ‘প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২’ ইত্যাদি। এসব আইন প্রণয়নের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের সর্বস্তরে দুর্নীতিমুক্ত রাখার প্রত্যয় ঘোষিত হয়। ‘মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২’-এর আওতাধীন অপরাধও দুর্নীতি হিসেবে বিবেচিত।
কিন্তু দুর্নীতিকে কেবল আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে দমন করা সম্ভব নয়, তার জন্য প্রয়োজন সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। এজন্য সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, সুশীল সমাজ ও নাগরিকগোষ্ঠীর সম্মিলিত প্রয়াস দরকার। এছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধে মানুষকে নৈতিক জীবন-যাপনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সততা দ্বারা প্রভাবিত আচরণগত উৎকর্ষ যেন সে অনুসরণ করে চলে। দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যক্তি-পর্যায়ে কর্তব্যনিষ্ঠা ও সততা, তথা চরিত্রনিষ্ঠা খুব দরকার। সর্বোপরি মানুষকে জাগ্রত বিবেক নিয়ে চলতে হবে। দেশের বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতি নিয়ে আমরা বিব্রত ও বিচলিত বোধ করছি। কিন্তু যাঁদের জবাবদিহি করার কথা তারা তা করছেন না। তাই সামাজিকভাবে একতাবদ্ধ হয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে লড়তে হবে। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশ। দেশের সাধারণ মানুষের জাগ্রত বিবেকের কারণেই আমরা একাত্তরে বিজয় লাভ করেছিলাম। তেমনিভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধেও আমাদের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। তাহলেই আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে পারবো।