আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস। জাতির পিতার জন্মবার্ষিকীতে জানাই বিন¤্র শ্রদ্ধা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন লড়েছেন বাংলার স্বাধীনতা ও বাঙালির জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। স্কুলজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলির বিকাশ ঘটে। নিজেই নিজেকে রাজনৈতিকভাবে এবং গণমানুষের অধিকার আদায়ের প্রস্তুতের আদর্শে গড়ে তোলেন। তাঁর জাতির পিতা বা বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার পেছনে টুঙ্গিপাড়ার মানুষের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। এই ছোট্ট অনুন্নত গ্রাম ও মানুষের মধ্যে তিনি লক্ষাধিক গ্রাম ও কয়েক কোটি মানুষকেও দেখেছেন। আর সে জন্যই বাঙালি জাতির ভাগ্যকে তিনি জয় করতে গিয়ে নিজের জীবনের প্রতি তাকিয়ে দেখার সুযোগ পাননি। জেল-জুলুম, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার সব কিছু সহ্য করেছেন; কিন্তু বাংলার মানুষের সঙ্গে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। তাঁর লক্ষ্য ছিল বাংলার মানুষের মুক্তি।
কিউবার বিপ্লবী প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি।’ ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট ১৯৭২ সালের এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আপনার শক্তি কোথায়?’ বঙ্গবন্ধু সে প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আমি আমার জনগণকে ভালোবাসি।’ ‘আর আপনার দুর্বল দিকটা কী?’ বঙ্গবন্ধুর উত্তর, ‘আমি আমার জনগণকে খুব বেশি ভালোবাসি।’ এই হলেন বঙ্গবন্ধু। জনগণের অন্তর্নিহিত শক্তির ওপর অপার আস্থা-বিশ্বাস, অসাম্প্রদায়িক, মানুষের প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা, মমত্ববোধ, ত্যাগ স্বীকার এবং সহমর্মিতার বিরল দৃষ্টান্তসমৃদ্ধ মানুষ বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে প্রথম সরকারের মাত্র সাড়ে তিন বছরের সংক্ষিপ্ত সময়টুকু নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। শূন্য থেকে শুরু করে তাঁর সরকারকে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের অগণিত সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ সব ক্ষেত্রে রাষ্ট্র এবং জাতিগঠন কার্যক্রম শুরু হয়। পুরো দেশ যখন ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, ঠিক তখনই আসে আরেকটি আঘাত। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট মধ্যরাতে একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা হত্যা করে শেখ মুজিব এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের। শুধু তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেই সময় দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান। সদ্য স্বাধীন জাতির জীবনে এক অপূরণীয় ক্ষতি নিয়ে আসে এই জঘন্য হত্যাকা-, তৈরি করে রাজনৈতিক শূন্যতা, ব্যাহত হয় গণতান্ত্রিক উন্নয়নের ধারা।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দুই দশকে নানাভাবে ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা স্বভাবতই বুঝতে পেরেছিল তীব্র প্রতিবাদ না হলেও স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু শব্দগুলো ঠিকই রয়ে যাবে ইতিহাসের পাতায়। ফলে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে তারা বঙ্গবন্ধু এবং ইতিহাস বিভিন্নভাবে বিকৃত করেছিল। কিন্তু তারা জানতো না বাঙালির হৃদয় থেকে কখনো বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা যাবে না। সেই ইতিহাস বিকৃতকারী পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা আজ আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ঠিকই আছেন বাঙালির চেতনায়, বাঙালির হৃদয়ে।
স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকায় নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের তথা বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে। জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজে আমাদের সকলকে অংশগ্রহণ করতে হবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে। আসুন, সবাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করি এবং তা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিই। একই সাথে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিজেদের বলীয়ান করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।