দেশে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের আন্তর্জাতিক মর্যাদার স্বীকৃতিকে উদযাপন করা হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে। সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা তাতে ভাষণ দিয়েছেন। গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের এক সংবাদবিবরণী থেকে জানা যায় অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, ‘৭ মার্চের প্রেরণায় আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।’ কিন্তু কীভাবে? প্রশ্ন থেকেই যায়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের মর্মকথা ছিল মানুষের মুক্তি।
পৃথিবীতে যে-কয়টি ভাষণ সেরার শিরোপা অর্জন করেছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ তার একটি। এই ভাষণগুলোর প্রত্যেকটির অন্তঃসার চূড়ান্ত বিবেচনায় মানুষের মুক্তি কিংবা মানবতার প্রতিষ্ঠা। এই মার্চ মাসেই ২৩ তারিখে একটি ভাষণ দিয়েছিলেন পেট্রিক হেনরি সেই ১৭৭৫ সালে। তার ভাষণের সার কথা ছিল, ‘আমাকে স্বাধীনতা দাও, নয় তো মৃত্যু।’ আর বঙ্গবন্ধুও সেই একই কথার প্রতিধ্বনি করে বলেছেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ১৯৩৯ সালে মোহন চাঁদ করম চাঁদ গান্ধি তাঁর ভাষণে ইংরেজদেরকে ভারত ছাড়তে বলেছিলেন, তাঁর ভাষণেরও মর্মার্থ প্রকারান্তরে দেশের স্বাধীনতা, দেশের মানুষের মুক্তি।
মানুষের মুক্তি মানে মানবতার প্রতিষ্ঠা ও চিরন্তন শান্তির সূর্যোদয়। বাংলাদেশ উন্নয়নের যে মহাসড়ক ধরে এগিয়ে চলেছে সে-পথ পুঁজিবাদী উন্নয়নের পথ। এই পথে উন্নয়নের একটি নেতিবাচক দিক হলো, সমাজ সদস্যদের মধ্যে ধনবৈষম্য বাড়বে এবং প্রকারান্তরে মানুষের সার্বিক মুক্তিকে অসম্ভব করে তোলবে এবং নিপীড়ন নির্যাতনের অবসান হবে না কখনও। যেহেতু পুঁজিবাদের একমাত্র চলিকাশক্তি মুনাফা। মুনাফা মানুষের শ্রমশক্তিকে শোষণ না করে সম্ভব হয় না। শোষণ পুঁজির প্রাণ। আর যতো দিন শোষণ থাকবে ততো দিন মানুষের মুক্তি সম্ভব নয়। সুতরাং মানুষের মুক্তির জন্য বিকল্প পথ ধরতেই হবে।
৭ মার্চের ভাষণের অনুপ্রেরণায় দেশকে এগিয়ে নেওয়ার অর্থ একটাই, মানুষের মুক্তি। আর মুক্তি তখনই সম্ভব যখন প্রচলিত অর্থনীতির পথ বদলে বিকল্প পথে রাষ্ট্র-সমাজের উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এই বিকল্প পথে উত্তরণে ব্রতী হতে গিয়েই বঙ্গবন্ধুকে প্রাণ দিতে হয়েছে এবং তাঁর ভাষণের মর্মার্থ নিয়ে দু’বছর কম অর্ধশতাব্দী পরে আমরা আলোচনায় ব্রতী হয়েছি, স্বপ্ন দেখছি ভাষণের অনুপ্রেরণায় এগিয়ে যওয়ার। কিন্তু সে পথ বড় বন্ধুর।