গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠে দুদকের গণশুনানি সম্পর্কে সংবাদ পরিবেশন করতে গিয়ে পত্রিকায় লেখা হয়েছে, “সরকারি অফিস সমূহে সেবা সুবিধাদি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যা শ্রবণ ও নিষ্পত্তি, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতামূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ছাতকে দুদকের গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।” দেশের এক শ্রেণির মানুষ সরকারি কি বেসরকারি যে শ্রেণি-পেশা বা স্তরেরই তাঁরা হোন না কেন দুর্নীতিকে জীবনের পাথেয় করে নিয়েছেন এবং অন্য আর এক শ্রেণির মানুষ আছেন যাঁরা (আমজনতা) প্রতিনিয়ত দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন। পরিস্থিতি এমন যে, যে-কেউ বলতেই পারেন, মোটকথা দেশের মানুষ দুর্নীতিবাজ ও দুর্নীতিবাজদের শিকার এই দুই ভাগে বিভক্ত। এর একটা প্রতিকার দেশের মানুষ চাইছেন আজ থেকে নয়, বলতে গেলে ব্রিটিশ আমল থেকেই। ব্রিটিশরা এই দেশকে শাসন ও শোষণ করার মতলবে এখানে তাদের বশংবদ আমলা শ্রেণি তৈরি করে। বিদগ্ধজনেরা যাদেরকে খালে চামড়ায় ভারতীয় ও মনেমগজে ইংরেজ বলে অভিহিত করেছেন। আর তারা হলেন ইংরেজ সা¤্রাজ্যবাদী চিন্তক মেকলের পরিকল্পনা মাফিক তৈরি একটি সামাজিক স্তর বা শ্রেণি। এই শ্রেণির উত্তরাধিকার হলেন অনেক আমলা। এই ঐতিহাসিক সত্যকে যদিও ক্ষেত্র বিশেষে আড়াল করা যায়, কিন্তু অস্বীকার করা যায় না কীছুতেই। স্বাধীনোত্তর কালে এরা নিজেদেরেকে মেকলের চিন্তার প্রভাব থেকে স্বাধীন করতে পারেননি, এখনও ইংরেজদের মতো এই দেশকে নিজের বলে ভাবেন না, তারা ভাবেন এই দেশটা তাদের সম্পদ অর্জনের একটি উপকরণ মাত্র। এখানকার মানুষ তাদের কাছে এক টুকরো মজাদার আখের মতো, চিবিয়ে ছুবড়া বানানোর বস্তু।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্যসহনশীলতা দেখানোর প্রত্যয় ঘোষণা ও তা কার্যকর করার তৎপরতা হাসিনা সরকরের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ও অর্থবহ রাজনীতিক কর্মসূচি। হাসিনা জানেন, দুর্নীতিকে বাঁচিয়ে রেখে উন্নয়নের সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া যাবে না।
বাংলাদেশে দুর্নীতি রয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এই দুর্নীতিকে নির্মূল করার যে-প্রত্যয় আমাদের বর্তমান সরকার ঘোষণা করেছেন, এবং সে-ঘোষণাকে কার্যকর করার জন্য যে জোর তৎপরতা চালিয়েছেন তাতে সরকারের সদিচ্ছার কোনও কমতি আছে বলে মনে হয় না। সরকারকে সাধুবাদ জানাই, আর বরাবরের মতো এবারও প্রত্যাশা করি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সরকার এবার অন্তত জয়ী হবেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ জয় একাত্তরের যুদ্ধজয়ের চেয়েও এক অর্থে কঠিন ও দুষ্কর। তারপরও জয়ী আমাদের হতেই হবে। জয় না পাওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।