গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের দু’টি সংবাদশিরোনাম বিদগ্ধ ও সচেতন মহলের দৃষ্টিকে সহজেই আকর্ষণ করার মতো দ্যোতনাকে ধারণ করে এবং বাংলাদেশ বর্তমানে যখন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে তখন ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে এরকম উজ্জীবক প্রত্যয় ব্যক্ত করা সত্যিকার অর্থেই দেশের মানুষকে আশান্বিত করে তোলে এবং অফুরন্ত সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখায়। কারণ এমন কথা কোনও সরকার প্রধান বা কোনও মন্ত্রীর মুখ থেকে উচ্চারিত হওয়ার ঘটনা কীছুটা হলেও বিরল। সংবাদশিরোনাম দু’টির একটি প্রধানমন্ত্রী ও অন্যটি পরিকল্পনামন্ত্রীর বরাতসংশ্লিষ্ট। দেশে বিনিয়োগের প্রসঙ্গ বিবেচনায় দুটিই তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্ববহ এবং দেশবাসীর জন্যে আশাপ্রদও বটে।
বাংলাদেশ বিশ্বে বোধ করি সর্বোচ্চ ঘনবসতিপূর্ণ দেশের অন্যতম একটি। এখানে আর্থসামজিক বিন্যাসকে এমন করে বিন্যস্ত করে রাখা হয়েছে যে, দেশের জনসংখ্যা উৎপাদনমুখি জনশক্তি হয়ে উঠতে পারছে না, বেকারত্ব কিংবা কর্মসংস্থানের চাপে দেশের মেরুদ- ন্যূব্জ হয়ে আছে এবং সর্বাস্তৃত দুর্নীতি এই সঙ্গীন অবস্থাকে উত্তরোত্তর আরও সঙ্গীন করে তোলছে, কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থাকে কর্মসংস্থানের চাপ নিরসনের উপযুক্ত করে তোলার কোনও প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে না এবং বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় বোধ করি তা সম্ভব নয় এবং বাংলাদেশের মতো দেশকে শোষণ করে ছিবড়ে বানানোর পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে বজায় রেখেই বাংলাদেশ উন্নতির শিখর স্পর্শ করার আন্ডি (চ্যালেঞ্জ) নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পথ চলছে এবং এই আর্থনীতিক পরিপ্রেক্ষিতে একদিকে তিনি দেশের প্রবাসী নাগরিকদেরকে বলেছেন দেশে বিনিয়োগ করার জন্য এবং অন্যদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানোর প্রত্যয় ঘোষণা করছেন, নিরসনের কথা বলেননি। আমরা প্রধানমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীর এই যৌথ উদ্যোগকে সমর্থন করি ও সাধুবাদ জানাই এবং এই সুবাদে দু’জনকেই অভিনন্দিত করি।
বাংলাদেশ এমন একটা দেশ, স্বাধীনোত্তর কালেও এখানে সেই ব্রিটিশ আমলের আমলাতান্ত্রিকতাই এখনো চলছে। তখন আমলারা মনেমগজে প্রভুত্বের মেজাজ নিয়ে যেমন ইংরেজ ছিলেন এখনও তারা তেমনিই আছেন জনগণের প্রভু হয়ে, যে জনগণ তাদের বেতন দিয়ে থাকে এবং তাদের উপরি কামাইয়ের জোগানদার। তারা ঔপনিবেশিক আমলের আমলাই রয়ে গেছেন, ফলে তাঁরা দেশটাকে যতই নিজের দেশ বলে ভাবুন না কেন কার্যত তাদের কাছে যে দেশটা একটা বিদেশের মতো, যেমন ছিল ইংরেজদের কাছে ভারতবর্ষ, তার প্রমাণ তারা দিয়ে থাকেন তাদের বিভিন্ন কাজকর্মে ও নিজেদের আয়বহির্ভূত সম্পদের স্ফীতি যৎপরনাস্তি বাড়িয়ে। এই প্রসঙ্গে কেবল একটি কথা স্মরণ রাখলেই চলে যে, কোনও দেশপ্রেমিক মানুষ দেশের কাজে দীর্ঘসূত্রিতাগ্রস্ত কীছুতেই হতে পারে না, কিন্তু আমাদের দেশের আমলাতান্ত্রিকতা স্পষ্টত দীর্ঘসূত্রিতাগ্রস্ত।
অতীতে প্রবাসীরা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দুর্নীতিগ্রস্ততার কারণে দেশে বিনিয়োগের সুযোগ থাকার পরেও সে সুযোগ গ্রহণ না করে বিদেশেই ফিরে গেছেন এবং ফিরে যাওয়ার আগে তার গ্রামের বাড়িতে একটি আলিশান ইমারত তৈরি করে তার সম্পদশালিতার জানান দিয়ে গেছেন।
সুতরাং প্রবাসীদেরকে প্রধানমন্ত্রী যখন দেশে বিনিয়োগের আহ্বান করেন, তখন আমাদের আশঙ্কা জাগে বিদ্যমান দুুর্নীতি ও দীর্ঘসূত্রিতার পাকেচক্রে পড়ে না শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনাটি ভেস্তে যায়। এই পরিকল্পনাকে আমরা যেমন সমর্থন করি তেমনি চাই এই পরিকল্পনা যেনো ব্যর্থ না হয় এবং তার জন্য কঠোর নীতি অনুসরণ নয়, বরং যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে, যে করেই হোক, এর কোনও বিকল্প নেই।